প্রতিবিম্বের বিবর্ণ কাব্য– ১৭

শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৪

তেজস্বী রোদের দাপট এখন এর নেই। ঝলমলে ভাবটা কিছুটা মলিন। শুকনো কাঁটায় ঝুলে থাকা দীর্ঘশ্বাস ঝরে পড়েছে। থেকে থেকে ভেসে আসছে কিছু পোড়া বাতাস। দমকা সে বাতাসের নাম দিয়েছি অর্বাচীন। কথা হয়নি তার সাথে তবু জেনেছি তার আদি অন্ত।

হঠাৎ নিদাঘ আকাশের সীমাহীন চূড়ায় চক্রাকারে উড়ে চলে এক ভুবন চিল। আশেপাশে আর কোথাও কোন পাখি নেই। ঊর্ধ্বদৃষ্টি বিদ্ধ হল সে আকাশ সীমায়। তারপর বুকের ভিতর অনুভূত হল গভীর শূন্যতা । ঝরে পড়ল আবার দীর্ঘশ্বাস আর ধ্রিয়মাণ ধ্রুপদ। মটির দিকে তাকিয়ে দেখি একটি মৃত সাদা বক আর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রক্ত, রক্ত মাখা পালক। শিহরিত হল সমস্ত শরীর বিদ্যুৎ গতিতে।

কিছু কাকেদের ডাক কানে এলো। তারপর তাকিয়ে দেখি অসংখ্য কাক চারিদিকে কা কা শব্দে বিভোর। আকাশ চূড়ায় উড়ে চলা ভুবন চিলটি আর নেই। কিছু বাতাসের ঝাপটা এসে লাগলো মুখের আঙিনায়। কিন্তু সে বাতাস অনির্ণেয়,অচেনা, দিয়ে গেল অন্য এক অনূভব্য শিহরণ।

আমি বিদায়ের কথা বলি

বুধবার, ২ এপ্রিল, ২০১৪

বেঁচে থাকার অদম্য সেই আকুলতা আজ আর নেই এতটুকুও-
ফুরিয়ে গেছে সব চাওয়া পাওয়া, প্রত্যাশায় বোনা রঙ্গিন স্বপ্ন।
অগচরে ফুরিয়ে গেছে নিজের প্রয়োজন যেন নিজের কাছেই,
তাই- মনে জাগে বিতৃষ্ণা, বিদায়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষা, স্বাদ।
প্রদীপের পাশে ঘুরে ঘুরে মৃত্যুর ক্ষণ গোনে ক্ষুদ্র পোকার দল-
আমি তাকিয়ে দেখি। আমি খুঁজে ফিরি আঁধারে মৃত্যুর আলো।

পড়ে থাকে বাঁশি, হারিয়ে যায় সেই বাঁশরীর সুর, লয়, টান-
কাব্য কথারা হারিয়ে যায় ঠাস বুনটের অভিমানী মেঘলা দুপুরে।
আমি অবাক চোখে দেখি অস্ত সূর্য, ভেজা সলতের ভগ্নাংশ,
বুনো ফুল ঝরে যায় গহীন অরণ্যে, মনে জেগে ওঠে বিরহ-ব্যথা।
নৈশব্দে নিভৃতে ছুটে চলে স্বচ্ছ জলস্রোত নীল চোখের মণিতে,
আমি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গড়ি-হাহাকার, বীভৎস ধ্বংসের স্তূপ।

ফেরারি পাখির মত জীবন নিয়ে আজ খুঁজে ফিরি নিরাশা
অন্ধ আঁখির মত ডানা মেলে উড়ে যায় মন নিকষ আঁধারে।
ক্লান্ত শ্রান্ত দেহে নামে না নোনা ঢেউ, বান আসে নীল বিষের,
নক্ষত্রের অভিশাপে জ্বলে অন্তর, ভেঙ্গে যায় সব অভিলাস।
নিরন্তর ছুটে চলার মাঝে নেমে আসে বিশ্রামের উন্মত্ত ঢল,
নিদারুণ উপেক্ষায় ভুলে যাই ক্ষণ গন্তব্য, সুনিবিড় পান্থশালা।

আমি বিদায়ের কথা বলি, তৃষালু নয়নে আঁকি অগ্নিশিখা,
আমি এই পৃথিবীকে জানাতে চাই চির বিদায়ের সেই বানী।
হয়তো কেঁপে উঠবে মাটির বুক, আমার শরীর সোফার্দে,
হয়তো জ্বলে উঠবে আগুন চিতার কাষ্ঠে, হয়তোবা ঐ -
ক্ষুধার্ত শকুনের হবে উৎসব আয়োজন এর বেশি কিছু নয়।
বয়ে যাবে বাতাস, বয়ে যাবে নদী, সাগর সব আগের মতই।

নক্ষত্রগুলো জ্বলে জ্বলে নিভে যাবে আবার রাতের আকাশে,
নিতান্তই অনিচ্ছায় শুধু দিন গুনে গুনে ক্লান্ত হবে মহাকাল।
দ্রাঘিমা অক্ষাংশ কিমবা বিষুব রেখায় ভেসে ওঠে ক্লান্তির ছায়া,
হয়তো সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে ভূপৃষ্ঠে অঙ্কিত হবে মলিন বিষণ্ণতা ।
জানি আমি-জানি হবে না দেখা আর রক্ত রাঙ্গা নতুন সকাল,
ঝরা ফুল হয়ে পড়ে রব অবহেলায় ধুলো মাখা মৃত্তিকার কোলে।

- আংশিক প্রকাশ।