ছেড়া পাতার কাব্য (মর্মর-১)

শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

প্রিয় আকাশকে জানিয়েছে শুভেচ্ছা-
বিবর্ণ ধুলোমাখা পথ, জল-সাগর, মেঘ-রোদ্দুর,মুক্ত বাতাস
সবুজ অরণ্যে ঘেরা মায়াময় উপত্যকা নাম তার ছেড়া দ্বীপ,
এখানে অনুভুত হয় ভারসাম্যহীন কম্পন,শ্বাস-প্রশ্বাসের ধ্বনি।
সুদূরে নীল আঁচল বাঁধা প্রান্তিক আকাশের বৈচিত্র্যময় রংমহল-
সুতোয় বাঁধা নৈসর্গিক সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা কখনোবা অন্ধকার,
অথাবা পড়ে থাকে অন্ধকারের খোলস, ভেজা চাঁদ, শুভ্র ছায়া,
অজস্র শিশির ভেজা ঘাসের ডগায় থাকে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের জাল,
সবুজ কার্পেটে নিত্য খেলা করে বিলাসী ঘাস ফড়িং এর দল
অঙ্কুরিত হয় স্বপ্ন বীজের, অগনিত সুখ,আনন্দ, হাসি, গানের।
 

এখানেই ঝরে পড়ে দীর্ঘশ্বাস, বিমর্ষ হলুদ পাতার রাশি-
ভাঙ্গা স্বপ্নের মানচিত্রের বুকে মর্মর ধ্বনি, বিরহ ব্যথার সুর
স্পষ্ট হয় দুঃখবোধ, বেদনার ব্যপ্ত নীল অধ্যায়,অসময়ের কাব্য,
হেয়ালি আশা প্রত্যাশার চাদর হাতে শূন্যতার মাঝে কাব্য বিলাস।
তবুও
বেখেয়ালী ঘোরে অসম্পন্ন থেকে যায় সে সুর,ছন্দ-
শুধু চিরচেনা পথের মাঝে খুজে পাওয়া ধুলোমাখা ক্ষীণ আনন্দ,
উড়ে যায় সেই সব ঝরা পাতা ক্লান্তির ঘোরে, নিরব অভিমানে,
এলোমেলো উড়ে উড়ে কখনোবা ফিরে আসে সেই বৃক্ষের নিচে-

যেখানে ছিল তার নীড়, ছিল আশৈশব গাঁথা কল্পনার বসতি
উন্মুখ হয়ে চেয়ে থাকে সবুজ পাতার দিকে,পেরিয়ে যায় কাল,
অথবা উড়ে যায় অন্য কোন খানে যেখানে হাহাকার শূন্য প্রান্তর-
যেখানে নেই সবুজ অরণ্য,জল-সাগর , নেই এতটুকুও ছায়া    
নিঃশেষে বিলীন হয় অন্তরাত্মা, ফুরিয়ে যায় রুপ,গন্ধ, সতেজতা,
অবশেষে হারিয়ে যায় শেষ মর্মর সুরে উদাসী হাওয়ার ডানায়।

ক্ষুদ্র আমি ক্ষীণজীবী এক মানুষ

মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

মানুষ! মানুষ আমি, ক্ষুদ্র আমি ক্ষীণজীবী এক মানুষ,
ক্ষণিকের তরে ক্ষীণ আশা লয়ে এসেছি এ ক্ষণিকালয়ে।
খরশাণ সময়ের মধ্যাহ্নে খণ্ডিত কাব্যে দেখি শূন্য খতিয়ান
তবুও রুদ্ধশ্বাসে গতিশীল জীর্ণ জীবনের রক্ত স্রোত,
আমি ভাসি সেই স্রোতে-
গাড় নিঃশ্বাসের তীব্র উষ্ণতা উপেক্ষা করে আমি ভিজে যাই।
দেখি- মুক্তির আশায় ছিটকে পড়েছে গলন্ত তরল এসিড,
আশা, প্রত্যাশা কিংবা স্বপ্ন তাই বিলীন হয়েছে নিরাশায়।

হায়! অন্ধ পৃথিবী, অন্ধ আজ লক্ষ কোটি সজাগ দৃষ্টি,
ভেঙ্গে গেছে সব দর্পণও, কোথাও তাই প্রতিবিম্ব নেই।
যে জলে এতদিন দেখেছি নিজের ছায়া তাও আজ ঘোলাটে
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শুধু ভাঙ্গা ঘুম, ক্লান্তি আর ব্যর্থ দীর্ঘশ্বাস,
এখানেই বসবাস আমার-
চারিদিকে ক্ষুধা,তৃষ্ণা, বিতৃষ্ণা, মৃত্যুর ভয়, এই নাকি জীবন।
ভগ্ন প্রণয়ের সম্মুখে দেখি অস্তিত্ব, তবে তাও সংশয়ে ঘেরা,
তবে কি ভারসাম্যহীন বুকের পাটাতন অসার, বন্দী আবেগ।

হাহুতাশ! না না আমি অপারক তাতে, প্রকাশে দ্বিধাহীন,
রঙ্গিন মলাটের আড়ালে গুটিকয়েক কালো অক্ষরের কথা বলি।
ওরাও জানে ন্যাকামি, বিরিক্তিকর আদিখ্যেতা, তাই এত ঘিঞ্জি
তবুও কেটে কুটে লিখে যাই ফের, বেড়ে যায় পৃষ্ঠা, ব্যথাও,
এভাবেই কেটে যায় দিন-
কেটে যায় জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহূর্তগুলো, যেন ভাবলেশহীন।
দেখি-সম্মুখে প্রসারিত পথ, আলো-ছায়া, অন্ধকারের খোলস,
ভাবি ক্ষণজন্মের ইতিকথা, ক্ষুদ্র আমি ক্ষীণজীবী এক মানুষ।

প্রতিবন্ধকতার বলয়

সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

জন্মান্তর যদি মিথ্যে হয় এই হবে শেষ দেখা। দুঃখ, জরা,ক্লেদ,বিরহ, বেদনা কিংবা দগ্ধ যন্ত্রণার কাছ থেকে শুধু নয়, বিদায় নেব- নতুন সূর্য, আলোকিত পৃথিবী, ঝরা শিশিরের কাব্য, অঝোর ধারার বৃষ্টি থেকেও। জানি আমি এ অন্যায়, ব্যর্থ বোকা মানুষের কথা । এ সিদ্ধান্ত কেবলই মূর্খতা, তবুও আজ নিরুপায় আমি তাছাড়া আমি বিজ্ঞও নই। চারিদিকে ধুসর কাল ছায়া, প্রবঞ্চনার পঞ্চালিকা। ঘৃণায় প্রলুব্ধ মন আজ ভগ্ন বিশ্বাস আর তিক্ত যাপিত জীবনের অনুপুঙ্খের প্রান্তিক দ্বন্দ্বের সম্মুখে ঠাই দাড়িয়ে। শুধু কেঁপে ওঠা বুকের দীর্ঘশ্বাস বলে দেয় আমি বেঁচে আছি আজও।
পুরনো জানালার চৌকাঠে ধরা ঘুণ, ভগ্ন ঘরের চাল আমাকে বিভ্রান্ত করেছে প্রতিদিনই। চারিদিকে গভীর বিষাদের দেয়াল, বন্ধ দরজার পাল্লা। ভেবেছি আমি- ঐ ঘুণে ধরা জানালার চৌকাঠ, ভগ্ন ঘরের চালা সেকি মুক্তির দিশা নাকি নিরাশ্রয় হওয়ার অশনি সংকেত। দ্বিধা জাগ্রত মনে প্রতিটি ক্ষণে তাই জীবনকে মনে হয়েছে দুর্বোধ্য। অনুভুতি হয়েছে পথভ্রষ্ট, অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিভঙ্গি হয়েছে বিফল। তবুও বার বার ইন্দ্রিয়ভূত হয়েছে অচেনা এক সুর আজানা এক প্রতিবন্ধকতা ।
নিরেপেক্ষ মহাকালের কোলে আমি অপেক্ষা করেছি, করেছি আরাধনা,মিলাতে গিয়েছি এই তান্ত্রিক জীবনের যৌগিক অংকের সরল সমীকরণ।আমি পারিনি তা, তবে জেনেছি প্রেম মিথ্যে,শুধু কল্পনায় তার সত্য বিচরন।এখানে যুদ্ধ,ধংস,পাপ, অবিনাশী, বিবেক অন্ধ-বধির,জড় পদার্থ। তাই অপেক্ষার পালা শেষে আমি দুহাতে দেখেছি শুধুই শূন্যতা। তাই বেঁচে থাকার আকুলতা পৌঁছে গেছে একেবারে শূন্যের কোঠায়। অমরত্বের আগুন মিশ্রিত পরাজয়ের বলেয়ে বন্দী হয়ে আমার প্রতিটি পদক্ষেপ হয়েছে কেবলই অবান্তর। বেঁচে আছি এই সত্যকে প্রকাশ করতে আমি মিথ্যে অভিনয় করেছি প্রতিনিয়ত। হায় জীবন! অমূল্য উপহার সমাহার! হয়তো এটাই ভাগ্যের পরিহাস, নির্মম হেয়ালিপনার অমীমাংসিত অধ্যায়, চেনা-অচেনা জাগতিক পরাজয়ের অনুকাব্য। যে জন্মপরাজিত সে জয়ী হবেই বা কিভাবে? নিত্য সঙ্গী তার নিষ্ঠুর নিয়তি। জন্মই যেন হয়েছে অন্যায়, অপরাধ, আজন্ম পাপ। তাই প্রার্থনা আজ ক্ষমার।