দ্বিধা জাগে

শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৪

আজ দ্বিধা জাগে –মাটির বুকে সুখের অস্তিত্ব নিয়ে,
শূন্যে ভেসে যাওয়া পাখির ডানায় সুখ দেখে ভাবি আমি-
হয়তো সব হয়ে গেছে লুট,এখানে শুধুই হাহাকার,
এ শুধু কেবলই বিরান ভুমি
-তাই দ্বিধা জাগে।

অরণ্যের কাঁচা সবুজের মাঝে বিষ কাঁটা,
চোরা-আগুন শুকনো পাতায়, দ্বিধা তাই পথ চলায়-
বিচরিত পতঙ্গের জীবন পারাপারে।
বাতাসের প্রানে বিষবাস্প,মিশে আছে মৃত্যুর ছায়া,
তবুও আশৈশব অভ্যস্ত,ক্রমেই ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাওয়া।
আজ প্রান ভরে শ্বাস নিতে -তাই দ্বিধা জাগে।

যে মাটির বুকে মানুষ বেঁধেছে ঘর, আজ বুঝি তা ভঙ্গুর,
যে আকাশ ভেবেছি সীমাহীন আজ তার সীমারেখা সম্মুখে।
আজ দেখি নক্ষত্র আলোক বিন্দুরও আছে অপমৃত্যু,
শতাব্দীর বুকে টিকে থাকতে পারে না ধীরেন কচ্ছপও।
ঘাস ফড়িং,রঙিন ঘুড়ি,দুরন্ত ফিঙে পাখিটার ডানায়ও-
ভর করে ক্লান্তি। ফুরিয়ে যায় প্রদীপের ভেজা সলতে
-তাই দ্বিধা জাগে।

স্বপ্নের জল সিঁড়ি বেয়ে ওঠা পথ হয়ে গেছে আগুনের পথ,
কোমল প্রেমও হয়েছে পাথর,এই নিরেট সভ্যতার বুকে দেখি-
পাথর জীবন, পাথরের ফুল, পাথরের চোখ।
কুমারী বুকের হিরণ্ময় দ্যুতি জ্বলে জ্বলে ফিকে হয়ে গেছে,
উগ্রতায় বিলীন হয়েছে মুগ্ধতা ।
প্রাচীরের মত স্তম্ভিত সুদিঢ় বিশ্বাস আজ দেখি ঠুনকো,
প্রশান্তির নীড়ে আঘাত হানে প্রবঞ্চনার বান
-তাই দ্বিধা জাগে।

আজ দ্বিধা জাগে,বলতে পারি না ভালোবাসি কেননা-
আমার ভালবাসাও হিংস্র, তীক্ষ্ণ দৃষ্টির বাজপাখি,
আমি হতে পারিনি অপার্থিব মানুষ।
কাল-নাগের বিষফণা আমার হৃদয়ে,রক্তিম মৃত্যু হয়-
বিষদাঁতের ভয়াল ছোবলে যা বড় যাতনাময়
-তাই দ্বিধা জাগে।

মহাকালের বুকে জমা উজ্জ্বল ইতিহাস আজ দেখি মলিন,
ভাঙনের স্মৃতিকথা আজ হয়েছে উপক্ষেতি,হয়েছে রুপ কথার গল্প।
মূল্যায়ন শুধু অভিধানের পাতায় নিশ্চুপ ধংসের দিন গোনে,
আমারা যাকে সমাজ বলি তার বুকেই আশ্রয় গড়েছে-
পরজীবী ছত্রাক,প্রাননাশী ভাইরাস । নিত্য ছুটে চলেছে-
অসামাজিক কর্মকাণ্ডের দুরন্ত পাগলা ঘোড়া
-তাই দ্বিধা জাগে।

ঘুণপোকার মত প্রতিনিয়ত জীবনকে কুরে কুরে খাচ্ছে জীবনই,
যে আনন্দ বেদনায় মানুষ বদলে যায় ক্ষণিকের তরে -
তার অস্তিত্ব কেবলই শূন্যতায়, স্পর্শের বাইরে ,
তাই- সবই মনে হয় অবান্তর।
যে সময়ের প্রত্যাশায় মানুষ কেবলই দিন গোনে-
পঞ্জিকার পাতার দিকে তাকিয়ে, তা চলে যায় নিঃশব্দে,
পড়ে থাকে শুধু যাতনাময় অযাচিত সময়
-তাই দ্বিধা জাগে।

বর্ণময় আলোকসজ্জায় বাড়ে সৌন্দর্য,বাড়ে পাপ-ধ্বংস, তবুও-
হাসিমুখ, ক্রিস্টালের আলোর খাঁজে কালচার।
বোধে নেই-শ্রদ্ধা , ঈশ্বরও আপেক্ষিক ,
কবিতা বইয়ের কষ্ট লেখা পাতায় বানানো ঠোঙা হাতে-
হেঁটে যায় জীর্ণ অবুঝ বালক,
নিঃসঙ্গ মৃত্যু হয় অপ্রকাশিত লেখাগুলোর নিভৃতে
-তাই দ্বিধা জাগে।

জন্মের শুরু থেকে ক্ষুধা সত্য,চির অমর,
বাস্তবতায় নির্মম,নিষ্ঠুর অভাবনীয় নির্লজ্জ তাই-
ক্ষুধার্ত কাক, ক্ষুধার্ত শকুনের ঠোঁট দেখে জাগে শঙ্কা,জাগে মায়াও ।
এক টুকরো রুটি নিয়ে চলে যুদ্ধ ক্ষুধার্ত কুকুর আর-
দুর্ভাগ্যের বালকের সাথে । ভাগ্যবান মানুষেরও ক্ষুধা আছে কামের-
ক্ষুধা আছে লালসার ।
সর্বগ্রাসী ক্ষুধাও আছে এই পৃথ্বীতলে।
ক্ষুধার রাজ্যে কেউ ফুটপাতে,কেউ অভিজাত পান্থশালায়-
সাজানো শান্তি নিকেতনে,তবুও জাগ্রত অতৃপ্ততা ।
আমিও ক্ষুধার্ত হই , ভিতরে জেগে ওঠে নির্লজ্জ এক স্বত্বা,
তবে কি আমার ভিতরে দ্বৈত স্বত্বার সাংঘর্ষিক বসবাস?
নাকি আমিও অমানুষ?
-আজ দ্বিধা জাগে।

দ্বিধা জাগে- মনে, প্রতিটি ক্ষণে, কারনে অকারণে-
দ্বিধা জাগে- জীবনের কঠিন বাস্তবতার সম্মুখে দাড়িয়ে,
দ্বিধা জাগে- হৃদয়ের মাটিতে বোনা স্বপ্ন বীজের অঙ্কুরতায়,
দ্বিধা জাগে- মূর্তিমান বেদনায়,প্রানবন্ত উচ্ছ্বাসের আলোয়,
দ্বিধা জাগে- অর্বাচীন পাখির ঠিকানাহীন জীবন যাপনে,
দ্বিধা জাগে- হিংস্র শিকারির চোখে হিংস্রতা আবার মায়া দেখে,
দ্বিধা জাগে- অতৃপ্ত আত্মার কান্না, হাসি,আস্ফুট গানে,
রহস্যময় নিকষ আঁধারের সূচনায়, ক্লান্ত ভোরের ক্লান্তি ভরা মুখে,
ক্ষীয়মাণ আলো শেষে অন্ধকারে ঝলসানো অগ্নি-নারীর মুখ দেখে
-আজ দ্বিধা জাগে।

দ্বিধা জাগে- সদ্য জন্ম নেওয়া রাঙ্গা শিশুর অজ্ঞাত কথায়-
মৃত্যুশয্যায় শায়িত বৃদ্ধর পৃথিবীকে জানানো চির বিদায়ের বানীতে।
দ্বিধা জাগে- মাটিতে পড়ে থাকা ভাঙ্গা পাঁজরের হাড়,মাথার খুলি দেখে,
দ্বিধা জাগে- নতুন সূর্যোদয়ে আবার তার নিভে যাওয়া অনুক্ষণে,
দ্বিধা জাগে- ব্যস্ত রাজপথে আবার তার নির্বাক ঘুমন্ত জনশূন্যতায়,
দ্বিধা জাগে- প্রোগৈতিহাসিক কালের সূচনার কথা শুনে,
সভ্যতার বুকে নির্মম ধ্বংসের দৃশ্যায়নে, দ্বিধা আজ-
রক্তে ভেজা পতাকায়, সার্বভৌমত্বে, অর্জিত স্বাধীনতায়।
আজ দ্বিধা জাগে- বিবর্তনে, এপার- ওপার, নির্বাসিত ঈশ্বরে ।

পোড়ামাটির উঠোন জুড়ে জীর্ণ স্মৃতি

ধমনীর স্পন্দনের সাথে পেরিয়ে যায় সময়ের সহস্র প্রহর,
পোড়ামাটির উঠোন জুড়ে আসে জীর্ণ স্মৃতির শুকনো পাতা।
অতন্দ্র বূভূক্ষ হৃদয়ে বীভৎস উষ্ণতার ছোঁয়া এসে দোল খায়,
ঘুমন্ত জোনাকির দেহ ঢেকে গেছে গাড় কুয়াশার চাদরে।
অনুভূতিগুলো ঘুমিয়ে গেছে শান্ত হয়ে অধীর অপেক্ষা করে,
প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাস–দীর্ঘশ্বাস একাকার হয়েছে শূন্যতায়।
স্নিগ্ধ প্রভাতের পথে চলতে গিয়ে পূর্ণ হয়েছে হৃদয় রিক্তের বিষাদে,
কৃষ্ণকাশের নির্বাণ ধ্রুব তাঁরা দেখা যায় তবু ছোঁয়া যায় না।
মৃত নদীর বুকে অদৃশ্য ঢেউয়ের গর্জন শুনতে পায় না কেউ,
শুধু অবহেলায় ফোটা কাশফুল ছুয়ে যায় সবাই তীব্র আগ্রহে।

ক্লান্ত তীর্থ যাত্রী বেশে দুঃখ হাটে- সমাগত প্রার্থনার প্রহরে,
সুবর্ণ ক্ষণের প্রত্যাশা কেবলই বিস্ময়ের বলয়ে বন্দি।
বিচূর্ণ বিচ্ছুরিত আলোর মাঝে মৃত স্বপ্নের লাশের স্তুপ,
ক্রুশবিদ্ধ হয়েছে ভালবাসার মানচিত্র, পতাকা আর রোমাল।
রক্তাত্ত চিত্তের আর্তনাদ কেবলই গহীনেই বিলীন হয়,
ব্যস্ত রাজপথে নেমে আসে না অভিমানী মৌন মিছিল।
রক্তের দাগ মুছে আর কতটুকুই বা আড়াল করা যায় ক্ষত,
অশ্রুজলে কতটুকুই বা নেভানো যায় ভাঙা বুকের দাবানল।
ধর্ষিত সত্ত্বার নগ্নতা দেখে লজ্জিত হই নিজেই নিজের কাছে,
বাতাসের উপহাসে ব্যকারনহীন হয় মনের না বলা ভাষা।

দ্বৈতস্বত্বার গোপন মিলন দেখেনি কেউ, তবু জানে সবাই,
দেহের ধমনী, শিরার গভীর ষড়যন্ত্র আজ উন্মোচিত জনসমক্ষে।
এখনও নাকে লেগে থাকা ঘামের গন্ধে হই মাতাল-বেসামাল,
বিচলিত হই অতীত-বর্তমানের বিচ্ছেদ রেখার দৃঢ়তায়।
ভালবাসা ঘৃণা হয়ে ঘুরে বেড়ায় নিকষ আঁধারে,খাঁ খাঁ রোদে,
লাজ অন্ধ হয়ে চলে প্রকাশ্যে তবুও দ্বন্দ্ব হয় অপরাধবোধের সাথে।
মুহূর্তের পর মুহূর্ত চলে কেবলই অভিনব রঙ্গিন মুখোশে,
তবু, পিপাসার পেয়ালায় বদলায় না রং, শুধু তৃষ্ণা বেড়েই চলে।
অধিকারের আসন জুড়ে এক বিরাট শূন্যতা,হাহাকার স্পন্দন,
আশ্রয় খুঁজে খুঁজে নিজেকে বিলীন করাই হয়ত ভালোবাসার মানে।

নির্ঘুম বনবাসে এক নীরব অনুভূতি আমাকে আশ্রয় দেয় স্বইচ্ছায়,
বিষণ্ণতায় গাড় নীল ছড়িয়ে পড়ে সে তপোবনের আঙ্গিনা জুড়ে।
শীতল অনুভূতি হিম শীতল হয়ে জানিয়ে দেয় বেদনার স্পর্শকাতরতা,
জ্যোৎস্না বৃষ্টিতে ভিজে আমি চেয়ে থাকি আকাশের দিকে উদাসী হয়ে।
রহস্যের মাকড়শা জাল বুনে বুনে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে আমার পাশে,
আমি গভীর প্রেমের আলিঙ্গনে বন্দী করি বাহুডোরে উদার চিত্তে।
শুকনো কিছু ঝরা ফুল ভিজে যায় আচমকা এক পশলা বৃষ্টিতে,
আমিও ভিজে যাই নিমেষেই তবুও ভেজে না রুক্ষ এ মন এতটুকুও।
বেড়ে যায় আঁধারী কষ্টের দৈর্ঘ্য,প্রস্থ, উচ্চতা আর শূন্যতার ওজন,
আমি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে যাই, বইতে পারিনা আর এত অসহন ভার।

পলাতক প্রশান্তি ফিরে আসে না আর এই অস্থির অশান্ত প্রান্তরে,
কেবলই একাকীত্বের নীল গোলাপ ফোঁটায় উর্বর ব্যথিত হৃদয়ে।
কালো প্রজাপতির দল এসে ভিড় করে এই নীল গোলাপ কাননে,
হুতুম প্যাঁচার বিরহী গানের সুরে মাতোয়ারা এই পোড়া মাটির মদিরা।
এক বিন্দু জল,নদী, সাগর, আকাশ আর মহাকাশ বাঁধা পড়ে সুতোয়,
আমার এক হাতে সেই মালা অন্য হাতে পুরনো এক পোড়া বাঁশি।
আমি ভারাক্রান্ত সুর তুলি,কিন্তু ধ্বনিত হয় না, শুনতে পায় না কেউ,
শুধু শুনতে পায় পোড়া মাটির উঠোনে বসবাসরত কুনো ব্যাঙের দল।
গহিনে-গোপনে অনুভূত পরশে এসে দোলা দিয়ে যায় অতৃপ্ত এক সুর,
আমি ভুলে যাই বর্তমান, মনে হয় অতীতের মাঝে আমার চির বসবাস।

অভিশাপের আগুনে পুড়তে দেখেছি আমি গোটা পৃথিবীর বক্ষ,
তবুও সে আগুন আমি জ্বালাতে পারিনি- নিষ্ঠুর,পাষাণ হয়ে।
বারংবার শুধু কেঁপে উঠেছি মনের জ্বলন্ত চিতার তপ্ত আগুনে,
আমি পুড়ে সহেছি, জেনেছি বেঁচে থাকা মানে দগ্ধ যন্ত্রণা।
নিষ্ফল আবেদন করেছি বিধাতার কাছে বড় অসহায় হয়ে,
তবু বদ্ধ দুয়ার খোলেনি একটিও, আমি শুধুই চেয়ে থেকেছি।
ঘর ভেঙ্গে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে থাকে-রুস্থ এক হৃদয়ের উঠোন,
ছিঁড়ে যায় প্রণয়ের অভিলাস,অদৃশ্য প্রেমের এক মায়ার বাঁধন।
প্রতারণার আঘাতে ভেঙ্গে চুরে চুরমার হয়েছে অনুভূত এক জগত,
প্রিয়ংবদায় পূর্ণ পৃথিবী শূন্য হয়ে পড়ে থাকে শূন্য বক্ষের কুঠিরে।

অস্পষ্ট হচ্ছে পৃথিবী-অনুভুত স্বপ্নে মরীচিকা পড়ে পড়ে,
দুষ্প্রাপ্য ক্ষুধাবোধ জেগে আবার ডুব দেয় আঁধারের কালো জলে।
স্বার্থের অপমৃত্যুতে জীবন হয়েছে আজ অসমভুজের মত,
চন্দ্রাভুক অমাবস্যার সুচনা তাই এই অসময়ের অনুপ্রান্তে।
সঞ্চারিত হয় স্মৃতির উঠোন জুড়ে ব্যথিত বেদনার ঘোলা জল,
কিছু শুকনো স্মৃতির পাতা ভিজে যায় সে জলে, আমি ছুঁয়ে দেখি।
নিষ্কলঙ্ক বহুরূপতা আজ আবিস্কার করি কলঙ্কের এক রুপে,
দ্বিধা দ্বন্দ্ব ভুলে ঘৃণা করি তবু ভেতরে ভালোবাসা পুঞ্জিভূত।
ক্ষণে ক্ষণে ত্যাজ্য করেছি নিজেই নিজের মনকে অসংখ্যবার,
তবুও এই মুক্ত কারাগারে বন্দী রয়ে গেছি নিজেরই অজান্তে।

আমি হেঁটে গেছি ধুলোমাখা পথ ধরে তোমার পায়ের চিহ্ন অন্বেষণে,
জানি বৃথা সব তবুও সে চলার মাঝে খুঁজে পেয়েছি অজানা তৃপ্তি।
চলতে চলতে কখন যেন মাটির সাথে ঘুমিয়ে গেছে নিজের ছায়া,
আমি ডেকেছি বহুবার তবু ঘুম ভাঙ্গেনি,দেয়নি সাড়া একটিবারও।
অবান্তর সময়ের হাত ধরে শুধুই আমি চলেছি ফের নিজেকে হারিয়ে,
ধূলিধূসর স্মৃতি পড়ে আছে এই ধুলোমাখা সারাটা পথের বুক জুড়ে।
নৈহৃত কিমবা ঈশান কোনের বাতাস এসে স্পর্শ করে অনুভূত শরীর,
আচমকা কেঁপে উঠি, নাকে লাগে সেই পরিচিত বাতাসের গন্ধ।
ধুলোয় আঁকা আল্পনা এলোমেলো হয়েছে ব্যথিত বাতাসের সঙ্গমে,
আজ সে পথে দেখি কেবলই দহন জালা, দগ্ধ দুঃখের স্পষ্ট মানচিত্র।

দ্বিপ্রহরের কাঁধে ভর করে আসে গোধূলি লগন হৃদয়ের ক্ষরিত রঙ্গে,
মৃত্যু সাঁতার দেয় সাদা মেঘের দল গোপন ব্যথার নীরব সাথী হয়ে।
নিশুতি প্রেমের আলপনা আঁকে মেঘেরা ঢেউয়ে ঢেউয়ে অপূর্ব ঢঙ্গে,
ডিঙ্গি নৌকার বৈঠা হারিয়ে যায় রঙের নরম জলের শুভ্র আবরণে।
প্রতিনিয়ত প্রতিস্থাপনের খেলা চলে দুরন্ত মেঘের পরতে পরতে,
ধুপ গন্ধহীন টুকরো মেঘেদের রতির সঙ্গী হয়ে থাকে শুধু রঙ।
কিছু স্বপ্ন মঙ্গলের অমৃত মৌন বাসনা জেগে ওঠে বিষণ্ণ অনুরোধে,
ফের মিলিয়ে যায় নক্ষত্রের অভিশাপে নীলাম্বরী আকাশের নগ্ন বুকে।
ব্যবচ্ছেদ হয় পুঞ্জিত স্মৃতির শিরোনাম, বিষাদ আর আর্তনাদের,
চোখ ফেটে জল আসে, বুঝি-আজ অশ্রুদের লুকোনোর জায়গা নেই।

চন্দ্র বিন্দুর নিঃস্বার স্বপ্নচোখ ছড়ায় এখন বিষাদী নীল আন্ধকার,
নিঃসৃত সে অন্ধকারে মিশে গেছে নাড়ীর স্পন্দন আর গাড় চুম্বন।
এখন অস্পষ্ট স্বরে ভেসে আসে বুক ফাটা আর্তনাদ আর কান্না,
হৃদয়ের উঠোনে নেমে আসে ভরা মলিন জ্যোৎস্না স্মৃতির কাতরে।
দুঃখের চিত্রকর শুধু দুঃখ আঁকে রাত্রি সুমুদ্দ্রের উত্তাল বুকে জেগে,
খেলে জলজ খেলা- জল, রং আর বেদনার মাতাল ঢেউয়ের সংমিশ্রণে।
বেদনার্ত জ্যোৎস্না ক্লান্তিহীন কথা বলে সে দুঃখের চিত্রকরের সাথে,
নিরবে নিঃশব্দে প্রতিটি নিঃশ্বাসে ফুসফুসের বায়ু কুটরি আন্দোলিত হয়।
হৃদপিণ্ডের নিলয় থেকে শিকল ছিড়ে স্মৃতি ছুটে বের হয়ে আসে,
নাকের ডগা তির তির করে কেঁপে উঠে ভিজে যায় মস্তিষ্কের বিচলনে।

অস্পষ্ট রঙ্গমঞ্চ আবার স্পষ্ট হয়ে ওঠে, ভেসে উঠে হাসি মাখা সূর্য,
যেন রাত্রি সুমুদ্দ্রের তীরে প্রভাতের- প্রশান্ত,কোমল পুষ্পের বালুচর।
কিন্তু আজ আমার দৃষ্টি বন্দী হয়েছে কালো বেদনার বদ্ধ কারাতে,
কোমল প্রভাত আজ বড় অসহ্য, তিক্ত ব্যথার প্রারম্ভিক মনে হয়।
চোখের ভাষার ব্যাকরণ ভেঙ্গে সজ্জিত হয়েছে রোষানলের বর্ণে ,
একাকীত্বের নীল কষ্টে ডুবে ডুবে ফের ভেসে উঠি মায়াবী লগনে।
উচ্ছ্বাসিত আবেগ গলে পড়ে না আর রোদেলা আলোর বরিষনে,
পাথর মনে রোদ এসে প্রতিবিম্ব হয়ে ফিরে যায় তির্যক ভাবে।
রুক্ষ চোখের তাঁরায় আজ ভাঙা নূপুরের ছবি আর বিষধর ফণা,
স্মৃতির বিষ আজ আমার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে চলমান হয়ে আছে।

জীবন সায়াহ্নে দেখি স্মৃতির কাঁটাতার ,সীমান্তে প্রাচীর বেষ্টনী,
কাঁদা মাটির শব্দগুলো কিছু ঝুলে আছে কাঁটাতারে অসহায় হয়ে।
হৃদয়ের সব লুকোচুরি খেলা শেষ হয় এই সীমান্তে এসে,
অপেক্ষার পালা শেষ হয়ে আসে মুক্তোদানা অশ্রু,বিবর্ণ অবিধান।
হাজার ও অভিলাষ পালিয়ে যায় আঁধারে, বিষণ্ণ অবগাহনের আলিঙ্গনে,
বহমান দু:স্বপ্নের রাত নিত্য সাথী হয়ে থাকে আমার একাগ্র চিত্তে।
পৃথিবীর কোল জুড়ে নিস্তব্ধতা নিয়ে এখন আর রাত নামে না,
চারিদিকে কোলাহল, মুখরিত দুঃখ, বেদনার দগ্ধ বিলাপে।
মনের অব্যক্ত বাসনা বিলীন হয়েছে নিবিড় মনের সীমান্তেই,
মৃত প্রেমের ভাঙ্গা হাড়ে পূর্ণ হয় আজ মনের শ্মশান,অস্ফুট শূন্যতা।

আমার কল্পিত সহস্র আত্মহনন দেখনি তুমি একটি বারও ফিরে,
দুরাত্মার সাথে স্বআত্মার দাবি তুমি অগ্রাহ্য করেছ তা বোঝনি।
শুধু ভেবেছো উদাস কবির মনের ক্যানভাস কেবলই হেঁয়ালি,
রঙতুলিতে এঁকেছি তোমার সমস্ত সত্ত্বা, প্রত্যয়ী প্রেম-তুমি দেখনি।
বিলোপিত বেলাভূমির বিবর্ণ বদন চেয়ে থাকে আমার দিকে,
বেদনা বিহঙ্গ রুপে বিচরণ করে বর্ণচোরা ভাঙা পাঁজরের আকাশে।
আমার পৃথিবী ভেঙেচুরে চুরমার প্রবঞ্চনার প্রলয়ী ঝড়ে,
অতৃপ্ত আত্মাকে আহত করে পাশ কাটিয়ে চলে গেছো সন্তর্পণে।
অন্ধকার দেয়ালের শেষ প্রান্তে এসে দাড়িয়ে থাকি আমি নির্বিকার,
শুধু জীর্ণ স্মৃতিগুলো এসে আমাকে সঙ্গ দেয় আরও নিষ্প্রতিভ করতে।

ব্যঙ্গ করে নিজের ছায়া অসহায় মনের আত্মচিৎকার শুনে,
ছাই হয়ে উড়ে যায় অঙ্গিকার আর প্রতিজ্ঞার রূপালী কাগজ।
আমি শুধু দেখি অপলক দৃষ্টিতে নীরব,নিথর,অসাড় হয়ে,
হাত বাড়াতে পারিনা, আঁকড়ে ধরার চেষ্টা বৃথা হয় বার বার।
ব্যথিত আক্ষেপে কেটে যায় সকাল,দুপুর,রঙ্গিন গোধূলি,
স্নিগ্ধ বাতাস রুক্ষ হয়ে ফিরে আসে ভাঙা জানালার চৌকাঠে।
আকাশে গোঁত্তা খাওয়া ঘুড়ির মত আজ অস্থির চিত্তের চিত্রা হরিণ,
সবুজের চত্বরে ঘুরে ঘুরে-উষ্ণ এক মরুর বুকে এসে দিশেহারা।
চোখে ভাসে শুধু চোরাবালি আর তৃষিত হৃদয়ের ধুক-ধুক-স্পন্দন,
তপ্ত রোদ্দুর মাখা উষ্ণ প্রাচীরে হেলান দিয়ে ভাবি একদিন সমুদ্রে ছিলাম।

বজ্রনিনাদে ফিরে পাই চেতন,গুরুগম্ভীর স্বরাগম মেঘে মেঘে,
ভিজে যায় শুকনো পাতাগুলো,কিন্তু রক্ত অশ্রুতে নয়,বৃষ্টি ধারায়।
তুমি কাঁদনি, কেঁদেছে আকাশ ব্যথিত হয়ে গভীর আবেগে,
কেঁদেছি আমিও আকাশের সাথে,তাকে স্নান ভেবেছে সবাই ।
রাত্রি কেঁদেছে আঁধারে মুখ লুকিয়ে,প্রভাতে তাকে ভেবেছ শিশির ,
শুধু আমি জানি- সমবেদনার সাতকাহনে সে রজনী ছিল একান্ত সাথী।
পাহাড় কেঁদেছে তাই নেমে এসেছে ঝরনা ধারা,বৃক্ষ ঝরায়েছে পল্লব,
সমুদ্রে উঠেছে অশ্রুর প্লাবন, তুমি দেখছ তবু অশ্রু আসেনি ও চোখে।
আমার ভাঙা পাঁজর দেখে মৃত্তিকার বুক ফেটে হয়েছে চৌচির,
তুমি ভেবেছো চৈত্রের খরতাপে তুচ্ছ ফাটল,আমি দেখেছি তা কষ্টের পরিতাপে।

জীর্ণ স্মৃতির শুকনো পাতাগুলো উড়ে আসে মনের উঠোন জুড়ে,
এলোমেলো হয়ে যায় চারিপাশ অরুনন্দিত বাতাসের ঘূর্ণিতে।
ফুটে উঠা কোমল পদ্ম আজ অগ্নি মূর্তির মুখ হয়ে ভেসে ওঠে,
আলিঙ্গনের স্মৃতিকথা ভাঙ্গনের রুঢ় কথা হয়ে প্রাণে বাজে।
মেঘলা দিন কাটে না আর, নিন্দনীয় শুদ্ধতা মনের স্নিগ্ধতা ভাঙ্গে,
জানি প্রত্যাবর্তনও হবে না সুখের তবুও করি নীরব প্রত্যাশা।
পরাজয়ের বিস্মরণে আঁখিজল কেবলই কান্না নয় এ যে প্রেম,
ফানুসের মত উড়ে যায় স্বপ্ন – অজানা আকাশের ঠিকানায়।
বেঁচে থাকার কথা গাঁথা হয় আজ বোবা কান্নার মহাকাব্যে,
অন্ধকারাচ্ছন্ন নিঃসঙ্গতায় পথচলা আজ পোড়ামাটির উঠোন জুড়ে।

জানি আত্মাহুতিতে মেলেনা পরিত্রাণ, তাই বেঁচে আছি আজও,
কিছু ঋণ এখনও আছে বাকীর খাতায়, লেখা আছে অশ্রু দিয়ে।
ঘৃণায় নয় ভালোবাসায় শোধ হবে পুরনো হিসেব-নিকেশ,
আমানত অভিমান আমি ফিরিয়ে দেব তোমার শূন্য বিশ্বাসের ডালিতে,
বুকের ক্ষরিত কালো রক্ত দিয়ে আর এক বার সাজাবো তোমায়,
হৃদয়ের অভিধানে রাখা শব্দ-কথার মালা পরাবো তোমায় এবার।
তুমি দেখতে পাবে তবু স্পর্শ করতে পারবে না মৃত সে সত্ত্বাকে,
আরও কয়েক ফোঁটা রক্ত অশ্রু পাওনা আছে তোমার কাছে।
এই পোড়া মাটির উঠোনে এসে ফেলে যেয়ো সে অরুণিত জল,
জীর্ণ স্মৃতির শুকনো পাতা আরও একটু ভিজে যাক সে জলে।

অস্পর্শী চিঠি -১

অমৃতোপম অস্পর্শী,

অবরুদ্ধ দ্বার আজ খুলে গেছে নীরব যাতনায় । রূপালী রাতের অন্তিম লগ্নে অশরীরী হয়ে এসেছ তুমি ঘুম জড়ানো দুটি চোখের আঙিনায় । কিছুটা সময় কিছু কথা বলার প্রবল আগ্রহে ব্যকুল মনের অদম্য আকুলতাকে অগ্রাহ্য করতে পারছি না আর । কিন্তু তুমি তো তেপান্তরের মাঠে,আমার সীমানা ছেড়ে দূরে আরও বহু দুরে । তাই মনটা আজ উষ্ণ, বড়ই তৃষ্ণাতুর । জানি না খণ্ডিত মন নিয়ে অবিরত চলব আর কতটা পথ এই উন্মত্ত, আত্মদ্রোহী , আত্মভোলা আমি । জীবমন্দিরের এই অপূর্ণতা কবে পূর্ণ হবে জানি না । তবে , হৃদয়ের দহনজ্বালা থামাতে না পেরে রুদ্ধ -বাক বিচলিত হয়ে নেমে এসেছে আঙ্গুলের ফাঁকে এই সস্থা কলমে আর এক টুকরো সাদা কাগজের উন্মুক্ত বক্ষে। তোমাকে ভীষণ মনে পড়ছে, তাই ক্ষুদ্র এই লেখা । হৃদয়ে বন্দী কথামালাকে মুক্ত করে দিলাম বন্দিত তোমার নামে । কেমন আছ তুমি ? খুব বেশি-ই জানতে ইচ্ছা করছে ।
ইতি,
ধুসর স্বপ্নের আঁধার যাত্রী ।

অবশিষ্ট কিছু ধূসর কালো রঙ

আরও কত ফুল ফোটার ছিল হাসিমাখা নতুন ভোরের প্রারম্ভে,
কত পাখির কণ্ঠে ছিল সুমধুর সুর ওঠেনি তা আর জেগে।
লৃতিকার লুপ্ত জালে দেখা যায় লুণ্ঠনের ছাপ,ছিন্ন ভিন্ন দেহ,
লাবণ্য নেই,নেই সতেজতা সবুজ ঝাউ বনের বুকে সেই আগের মত।
নিরব বিদ্বেষে বিদায় নিয়েছে বিধ্বস্ত সুখ তাই-সময় আজ বিধুর ,
বিতৃষ্ণ বক্ষ কাঁপে না আর, পড়ে থাকে নিরেট পাথরের মত ঠিক।
প্লাবিত আঁখিজল নিয়েছে শুষে ধুধুময় মুখের মরু প্রান্তর।
আজ ক্লান্তি নেই, নেই পরিপ্লুত সেই চোখ, সবই যেন পরিভ্রষ্ট ।
দেখি পঞ্জিকার পাতার পরিবর্তন সেই একই নিয়মে শুধু,
আর সবই নিয়মচুত্ত্য,বিশৃঙ্খল,বিপ্রতীপ-ধুলি ধূসর কাব্য।
বাড়ন্ত লতাগুলো শুকিয়ে গেছে,শুকিয়েছে জল,পদ্ম পাতারাও বিষণ্ণ,
আকাশের সব রঙ বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে, অবশিষ্ট কিছু ধূসর কালো রঙ।

একটি শুভ্র ঘুমন্ত ফুল ফোটার অপেক্ষায়

বেলা প্রায় শেষ হয়ে এলো, বিদায়ী সূর্য আমাকে জানিয়ে দেয় তা,
আমি সূর্য ডোবা বিকেল দেখি, দেখি বিষণ্ণ সন্ধ্যার আগমন প্রত্যহ।
পাখির ডানায় ব্যস্ততা দেখে আমি নির্বিকার দাড়িয়ে থাকি অবেলায়,
মেঘ ভেসে যায়,সুদীর্ঘ পরিক্রমায় অঙ্কিত হয় কালের ক্লান্ত পদচিহ্ন।

কতদিন হল- আমার নিঃশ্বাস গুলো বন্দি বুকের অন্ধকার কারাতে,
মুমূর্ষ স্বপ্নগুলো জেগে ওঠে না আর, ভাসে না মুক্ত আকাশের প্রান্তরে।
ভাবি আমি, কত কাল পরে কাটবে এই কণ্টকময় নিমগ্নতার ঘোর,
কবে উঠবে জেগে – সজীবতার মাঝে বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছা।
জীবনের সব রং হারিয়ে ধূসরতার মাঝে হবে আর কত অবগাহন,
আর কত রক্তাত্ত সমুদ্রের বুকে একা একা ভেসে চলা শুধুই আনমনে।
কবে উষ্ণ রোদ্দুর এসে ছুয়ে যাবে আদ্র এ হৃদয়ের জীর্ণ আঙ্গিনা,
কবে সেই বৃষ্টি হবে রোদের সাথে, কবে ধুয়ে মুছে শুকিয়ে যাবে সব।

বেলা শেষ হয়ে এলে-শুনি কোন এক স্রোতাস্বীনির বুকের স্পন্দন,
দুচোখে আমার নিঃসীম আকাশ,তারার দীপালি,দলছুট সাদা মেঘ।
নিঃসঙ্গতার প্রাচীরে দাড়িয়ে তাকিয়ে থাকি একটি সোনালী ভোরের জন্য,
তাকিয়ে থাকি আমি – একটি শুভ্র ঘুমন্ত ফুল ফোটার অপেক্ষায়।

হৃদয়লোকে মলিন বিশ্বাস,চোখে বিষাদগ্রস্ততা

আজ আহত আমি তীক্ষ্ণ বিলাপে,প্রচ্ছন্ন বেদনার নীল তরঙ্গে,
প্রতীক্ষার পালা শেষে আমার মুঠো ভরা কষ্টের ধুলোমাটি।
কেবলই দুর্বলতা ভেবে পদদলিত হয়েছে নিঃস্বার্থ উদারতা,
ভাবনার আকাশে তাই দেদীপ্যমান আজ দুখের নক্ষত্র।
অহর্নিশ ভালোবাসাও অন্ধকার দেয়ালে নীরবে মিশে গেছে,
কোন অনুরাগে নয়,রক্তাত্ত হৃদয়ের ক্ষতে জ্বালা ধ’রে।
স্বপ্নগুলো অবলুপ্ত আজ,ব্যথিত চিত্তে জাগে অগ্নি-নোনা ঢেউ,
অনুসন্ধিৎসু মনের প্রকাশে তাই ব্যাবচ্ছেদ হয় হতাশার।
ধুপগন্ধহীন অনুভূতি জ্বলে জ্বলে নিভে আবার জ্বলে ওঠে,
দুরাকাঙ্ক্ষা ভেবে ফিরি পশ্চাতে তবুও ধেয়ে আসে যন্ত্রণা।
নিষ্প্রতিভ সুখের আঙ্গিনায় জমে জমে আরও ঘন হয় মেঘ,
অক্রিত্তিমভাবে পূজনীয় নীতি লুকিয়ে রাখে মুখ পরাজিত হয়ে।
অতৃপ্ত আত্মা বারংবার আহত হয়ে-দুমড়ে সংকচিত হয়,
ব্যস্ত রাজপথে তাই বুজে আসে চোখ একাকীত্বের গ্রাসে।
পড়ে থাকে ধুলো মেখে অন্তঃযাত্রীর অন্তিম ইচ্ছে গুলো,
দেহন্তরিত অনুভবে মিশে থাকে শুধু তার ধুসর-কালো ছায়া।
মর্ত্যলোকের বীভৎস বাস্তবতায় ছিন্ন-ভিন্ন হয় শুভ্র বাসনা,
হৃদয়লোকে থাকে শুধু মলিন বিশ্বাস আর চোখে বিষাদগ্রস্ততা।

একরাশ আকাঙ্ক্ষার পূর্ণ ব্যাবচ্ছেদ

অনুভবের অন্দরে একরাশ আকাঙ্ক্ষার পূর্ণ ব্যাবচ্ছেদ,
এখানে দাড়িয়ে হা-হুতাশ,অপূর্ণতার ভারি আলোকসজ্জা।
অর্বাচীন আমি-আমরা, সংখ্যার চূড়া ভেঙ্গে অনেকেই,
জাগতিক সময় রথের রশি হাতে ছুটে চলেছি অলক্ষে ।
কখনোবা থেমে যাই, পাখির কুলায় স্বপ্ন দেখে মুহূর্তেই-
থেমে যাই দ্বিধাবোধে,ব্যর্থতায় বাসা বাঁধে সুখ সন্তর্পণে ।
গাণিতিক সমীকরণ এখানে-মিথ্যে,মূল্যহীন, বায়বীয়,
অযাচিত আলিঙ্গনে দেখা দেয় বেদনার নৈসর্গিক প্রতিমূর্তি।
বিদ্রোহী আপন সত্ত্বার সংঘাতে শূন্য হয় এপার-ওপার,
বুজে আসে চোখ,আলোকিত পৃথিবী লুকায় গাড় অন্ধকারে।
ব্যক্তহীন কথার শিরোনামে ভিড় করে কষ্টের কুয়াশা,
ক্রান্তিকাল ফিরে ফিরে আসে রাশিচক্রের বর্গীয় গণনায় ।

কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি দাড়িয়ে

এখনও মোছেনি রক্তের দাগ-
বারুদের গন্ধ লেগে আছে নাকে
বাতাসে মিশে আছে আর্তনাদ,সহস্র বিদায়ী বার্তা,
ভাঙ্গা ঘরের চাল এখনও ওঠেনি দাড়িয়ে-
এখনও ঘুমন্ত কলি ওঠেনি পুরো ফুটে,
তবে কেন ফের যুদ্ধের আহ্বান?
কেন মিছে পড়ে আছে সংবিধান,তত্ত্বকথা,জ্ঞান?
স্বাধীন ভূখণ্ডে কেন পরাধীনতার ব্যবচ্ছেদ?
কেন আজও রাজপথে ক্ষত বিক্ষত লাশ?
সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলন্ত মৃতদেহের নিশান,
কেন ফের হাহাকার,অরদ্ধ ক্রন্দনধ্বনি?
কেন বিবেকের অপমৃত্যু?

নতুন সূর্যোদয় ঢেকে যায় দানবী ছায়ায়,
কেন মুক্ত বলাকা নিয়ে যায় শোকের বার্তা?
শুকুনেরা হানা দেয় রক্তের ঘ্রানে-
রক্তপিপাসু হায়েনার চোখে হিংস্র লোলুপ দৃষ্টি,
কেন ক্রমেই শুকিয়ে যাচ্ছে ঘুমন্ত ফুলের প্রান?
ভোরের নির্মল শিশিরে কেন আজ মিশে থাকে রক্ত?
কেন মায়ের চোখে শঙ্কা?
কেন আজ বুক ভরা দীর্ঘশ্বাস?
কোথায় স্বাধীনতা ?

স্বরলিপির মনস্তাপে কাটে অষ্ট প্রহর-
লাঞ্ছিত আজ ভাষার বৈভব,স্বকীয়তা,
রক্তে ভেজা পতাকা আজ পদদলিত,
নিতান্ত অনিচ্ছায় স্বীকৃতি জ্ঞাপন,
কেন সত্য আজ মুমূর্ষ , কেন অন্যায় আজ চতুরাঙ্গি?
কেন এই অবক্ষয়?
কেন ধ্রুপদী আকাশে জমছে গুমোট কালো মেঘ?
কেন আজ বজ্জ্র নিনাদী সম্ভাষণ?
তবে কি এই ছিল চাওয়া?
নাকি সবই অদৃষ্টের অভিশাপ?

আজও অসহায় চোখের কোনে ক্ষুধিত অশ্রু,
এক টুকরো রুটির মাঝে বেঁচে থাকার মানে।
কেন আজও জীবন নিষিদ্ধ পারাপার?
দুখের দহনে হৃদয়ের বীভৎস রূপ,
কেন আজও ধর্ম বর্ণের বর্গীয় ব্যবধান?
কেন অর্থের মানদণ্ডে মানুষের পরিচয়?
কোথায় সাম্যবাদীতা ?
কোথায় অধিকার ?
কোথায় শিকল ভাঙ্গার গান?
গর্জে ওঠা প্রানের জাগরন ।


এখনও শুকিয়ে যায়নি পুরনো সেই ক্ষত,
ধর্ষিতা বোনের আঁচল এখনও ভেজা,
ম্রিয়মাণ আলোয় জ্বলে মলিন বদন-
এখনও অশ্রুতে ভেজা মৃত্তিকার উষ্ণ শরীর,
তবে কেন ফের অশ্রুর প্লাবন?
কেন জাগ্রত আজও কুৎসিত লালসা?
কেন মানুষ হয়ে মনুষ্যত্বকে বিসর্জন?
তবে কি হারিয়ে গেছে চেতনা?
মূল্যবোধ কি আজ অন্ধ,বধির,নাকি নিরেট পাথর?
কোথায় প্রান খোলা হাসির ফোয়ারা?

বার বার জ্বলে উঠে নিভে যায় ক্ষোভ-
অভিশাপের আগুনে পোড়ে মন,জ্বালা করে চোখ,
তবু পুরনো বিভীষিকা ফিরে আসে আবার
কেন ইতিহাস হয়ে যায় পরিহাস?
কেন যন্ত্রণা ভাগ্যলিপিতে বন্দী ?
সময় কেন আজ অযাচিত?
কেন নেই কোন পরিত্রাণ?
নেই প্রশান্তির পরাগে শুভ্র রেনু,
কিন্তু কেন ? কেন ?
কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি দাড়িয়ে থাকি কেবলই-
কিন্তু প্রশ্নরা মিলিয়ে যায় শূন্যতায়…

শুধু আমার ছুটি নেই

হারিয়ে গেছে সেই রংধনু আকাশ,নভঃপ্রাণ,রাত্রিমণি,ছেড়া মেঘ,রোদ্দুর
প্রহত ধুলোমাখা পথে নির্বিকার মিশে আছে সেই সব স্মৃতির পসরা।
আজ কুড়িয়ে নিলাম দুহাতে। কিছু ললাটে নিলাম মেখে-অর্ঘ ভেবে ।
অলীক কল্পনায় নয়,যা ছিল সত্য হয়ে অর্হনীয় অভিধানে ।
শোভিত বর্ণের বরণীয় অনুগল্পের তাজা প্রানের চিলেকোঠায় যা ছিল-
অবয়বশূন্য হয়ে কম্পিত,জাগ্রত অনুভূতির বাহুডোরে। আজ বুঝি আমি-
জয়ন্তী বৃক্ষের শাখা প্রশাখা শুকিয়ে গেছে সব,শুধু জীবন্ত তার মূল,
মুমূর্ষ প্রানের স্পন্দন ধ্বনিত হয় শুধু নিশ্চুপ মৃত্যুর আলিঙ্গনে।
ঈষদুষ্ণ সেই মাটির বুকে আজ দাড়িয়ে দেখি আমি ।অবিসংবাদী সেই-
বেদনাগুলো অশ্রু হয়ে এসেছে চোখের পাতায়, কিছু ব্যকরনহীন হয়ে-
পড়ে আছে বুকের অরণ্যে।যেখানে কোলাহল নেই,নেই ঢেউয়ের গর্জন।
অরুনলোচনে বাসা বাঁধে অরুনসারথী,অর্চিত ধুলো মেখে কাটে অর্ধ বেলা ।
কর্ণকুহরে আন্দোলিত হয় নূপুরের নিক্বণ।আমি শুনে চমকিত হই,
তারপর দেখি শূন্য প্রান্তর। যেন ছুটি নিয়েছে সবাই। শুধু আমার ছুটি নেই।

নিরাপরাধ এক নাগরিক স্বত্বার মৃত্যু

সক্রেটিসের দেওয়া হেমলক বিষের পেয়ালা আজ আমার হাতে,
নিরাপরাধ এই নাগরিক স্বত্বাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে সবাই।
কারও মাঝে কোন দ্বিধা,দ্বন্দ্ব কিমবা এতটুকু ভ্রুক্ষেপ নেই,
আমি একবার থমকে দাড়িয়ে তাকিয়ে দেখলাম বেশ অকপটেই ।
অন্তিম মুহূর্তে আমি মৃদু স্বরে শুধু একটি কথাই বলেছি-
তোমরা জানো না মৃত্যু মানব জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ।
আমি জানি না কিছুই,তাই কোন তত্ত্ব কিমবা প্রকাশযোগ্য দর্শন নেই,
জ্ঞান নেই যাপিত জীবনের এই মূল্যবোধ,বিশ্বাস,মত,সংস্কারে।
তবে,জীবনের মানে উপলব্ধির মাঝে রয়েছে নিগুঢ় সার্থকতা,
মনুষ্যত্ববোধ,শ্রেয়কে প্রশ্রয় দিয়ে জীবন তৃষ্ণা মেটানোই অস্তিত্ব।
ন্যায়,সত্য,সাহস,ধর্ম,জ্ঞান,প্রজ্ঞা,দায়িত্ব,কর্তব্যের মোড়ক ছিঁড়ে-
একই সুতোয় বাঁধার নামই-চেতনাবোধের অদৃশ্য এক সেতু বন্ধন ।
একদিন তোমরা নিজেদের মুখোমুখি হলে-দেখা হবে অপরাধবোধের সাথে,
সেদিন উৎসারিত হবে নৈতিকতা,আত্মিক মনের এক অনন্ত আকাশে।।

হেঁটে আসা এক ভেজা বিকেল

মেঘাচ্ছন্ন গুমোট আকাশ, তারপর সিক্ত হল মাটি-
আজও মনে পড়ে স্পষ্ট সেই ভেজা বিকেলটা,
কিছুটা দূরের কার্নিশে ছিল জীর্ণ ভেজা দুটি কাক-
কিছু দমকা বাতাস ।
আমাদের হেঁটে চলা রাস্তা তখন নদীর মত,
সে দিন কাগজের নৌকা ভাসিয়েছিলাম আমরা-
তাতে ছিল না কোন মাঝি ।
ভেসে যাওয়া সে নৌকার দূরত্ব শুধুই বেড়ে যাচ্ছিল-
তারপর দৃষ্টির সীমানার বাইরে ।
আমাদের ভেজা হাতে ছিল ঠোঁট উষ্ণ করা তরল কফি,
চুমুকে চুমুকে গরম আবেশ ছড়িয়ে পড়ছিল সমস্ত শরীরে ।
নির্জনতা সেদিন আমাদের আরও কাছে এনেছিল-
আমরা দেখেছিলাম একে অপরকে নিবিড় ভাবে
আমরা হারিয়ে গিয়েছিলাম মুগ্ধতায় ,
হঠাৎ বজ্জ্রনিনাদে কেঁপে উঠেছিলাম -
কিছুটা সন্ত্রস্তে আশ্রয় খুঁজেছিলে তুমি এই বুকের আঙিনায়
বুঝেছিলাম আমরা প্রেম, অন্তর আত্মার ব্যকুলতা ।

সে আজ মিশে আছে শূন্যতায়

বৃষ্টির ছোঁয়ার মাঝে মিশে আছে সে___
তার হাসি,কান্না,গান,আন্নন্দ,বিস্ময়,অভিমান,
আমি বৃষ্টি দেখি,বুঝি তার নিগুঢ় মানে ।
ঝড়ের প্রনয়ে আমি কথা বলি তার সাথে-
শুভ্র বৃষ্টি ফোঁটা বিলীন হয় জলধারায়,সরল স্রোতে।
উদ্ভাসিত হৃদকম্পন ভাঙ্গা পাঁজরের হাড়ে,মেরুদণ্ডের সীমানায়-
কিছু দীর্ঘশ্বাস চলে যায় মৃত্যুর কোল ঘেঁসে অজানায়,
আমি ছুঁয়ে দেখি অতীত-স্মৃতির তরঙ্গ ।
অতঃপর শুকিয়ে পড়া রজনীগন্ধা ঝরে পড়ে নিচে,
শুন্য ফুলদানীর একাকীত্ব অনুভূত হয় অশ্রু স্পর্শে ।
কাল্পনিক অন্ধকার নেমে আসে মন অরণ্যে-
প্রেম তৃষ্ণায় ছুটে আসে ছিন্ন পদাবলী,নেশাময় চোখ,
অজস্র ভোর চুরি করে নিয়ে যায় তারা,পড়ে থাকে খোলস।
প্রভাতে দ্বার খুলে ঝরে পড়ে শিশির অবিরত,
নিঃশ্বাস ভিজে ভিজে ভারি হয় মধ্য দুপুরে।
আমি ছুঁয়ে দেখি তাকে হিমেল বাতাসে-
সে আজ মিশে আছে শূন্যতায়,
উড়ে যাওয়া গাঙ্গচিলের ফেলে যাওয়া পালক ছোঁয়ায়।।

বিষাদ টুটে চাই অবিসাম্ভ্য প্রাত

ক্রমেই অন্ধকার বেড়ে চলে দীপ্তিহীন অভিশাপে,
নিশ্চল বিছানা কোমল,মসৃণ,ভয়হীন তবু স্বপ্ন নেই।
অনুতাপ আর আকাঙ্ক্ষায় ঠাই মেলে নিজের,
কুয়াশার ডানায় ভেসে আসে আবছা দুঃস্বপ্নরা ।
অর্থহীন প্রত্যাশায় দোলে দীপ্ত প্রদীপ শিখা,আলোর শিশির,
ভগ্ন বাতাসের বুকে নেচে ওঠে ক্লান্ত অভিশাপ ।
সূর্যহীন,চন্দ্রহীন রহস্যময় কাল স্তব্ধ হয়ে থাকে কিছুক্ষন,
তারপর শুরু হয় চলা জাগতিক ঘড়ির কাটার সাথে ।
মৃত ভালোবাসারা ঘুরে বেড়ায় অতৃপ্ত ছায়ার চারপাশে,
কথা বলে মৃদু স্বরে অদৃশ্য মুখোশের আড়ালে ।
নিবিড় অন্ধকার একটুকু ঘুম নেই চোখের দরজায়,
অলক্ষের মুহূর্তগুলো কল্পনায় এসে ধরা দেয় নিমেষেই।
আপ্রাণ আমি পেতে চাই এক টুকরো স্নিগ্ধ হলুদ ভোর,
তবু ক্রমশই বেড়ে চলে অন্ধকার, অশুভ ছায়া।
বেড়ে চলে ক্রান্তিকাল,অরদ্ধ ক্রন্দন ধ্বনি,অশ্রু জল,
অপেক্ষমান নিঃশঙ্ক চোখ বিষাদ টুটে চায় অবিসাম্ভ্য প্রাত।

একটি দিনান্তের সরল অনুলিপি

রুশ বান্ধবী লিলির অনুরোধে বেশ ঢিমেতালে ডাউনলোড চলছে-
“দ্যা রিটার্ন” সিনেমার ব্লু-রে প্রিন্ট কপি-উন্মুক্ত টরেন্টের বুকে।
আর আমি শুয়ে আছি বাংলা অভিধান নিয়ে নতুন শব্দ অন্বেষণে,
পৌরাণিক শব্দটা চোখে পড়তেই মনে পড়ে গেল কল্প কাহিনী-
মৎসকুমারী কিয়ান্ডা এবং অন্যান্য পৌরাণিক কাহিনীর অংশ বিশেষ
পিপেটেলার রচিত “কিয়ান্ডার নিরবতা” বইটি সত্যিই চমৎকার ,
এখনও বুকসেলফে শিশুর মত ঘুমিয়ে আছে বইটি নিঃসঙ্কোচে।
স্পীকারে লো ভলিউয়মে চলছে রবীন্দ্র সঙ্গীত “আমি চিনি গো..”,
রবীন্দ্রনাথ বিদেশিনীকে কিভাবে চিনেছিল তার কিছুই জানি না আমি-
তাই,কাজটা মনে হয় একটু বেশি-ই শ্রমসাধ্য হয়ে যাচ্ছে আমার জন্য।
লিলির পাঠানো পিটবোলের রিমিক্সের লিংক গুলো জমেছে ইনবক্সে-
এখনও দেখা হয়নি একটিও,সত্যি কথা বলেতে ইচ্ছে জাগেনি ।
তবে,রাশিয়ার ত্রেপাক নাচের সাথে প্রেস্তো লয়ের অর্কেস্ট্রা সঙ্গীতে-
আমার ভালো লাগাটা চুপিসারে পৌঁছে গেছে মনের অজান্তেই ,
লিলিকে বলতেই ঝুপ করে ফেলে দিল তার সরল হাসির ঝুলিটা ,
আমিও হেসেছি তবে আমার হাসিটা সত্যি ছিল না মোটেও।
আমি তাকে শুনিয়েছি অতুলপ্রসাদের বাংলা ঠুংরি ধারার গান ,
তাই, আমি হয়েছি নিরস,ডিসপাইরিটি ফর্মুলার ফ্যকাসে সমীকরণ ।
দেয়াল ঘড়িটা বলে দিচ্ছে আমি এখন দ্বিপ্রহরের শেষ ভাগে,
তাই,বন্ধ করে দিলাম ভাবনার চিলেকোঠার ছোট্ট এই জানালাটা ।
মনে হলেই খুলে দিব বন্ধ জানালাটা,এখন আর নয়,আসি তবে ।

মোহ তত্ত্বে-মুখোশবান্ধব বাস্তবতা..

সমীকরণ-শব্দসঙ্গমের মাতাল ঘোর কেটে শুরু হয় নতুন দৃশ্যকল্প,
অটিস্টিক হৃদয়ের মোহ তত্ত্বে যেন আজ মুখোশবান্ধব বাস্তবতা ।
সেলুলয়েড ফিতার কুণ্ডলি পাকিয়ে জমা হয় প্রদর্শনীর যান্ত্রিক বাক্সে ,
নগরীর কৃত্রিম মায়ার বেষ্টনী আটকে রাখে আমাদের চলমান জীবন।
কৃত্রিম খাদমেশা আলেয়ার আলোয় ডুবে যায় প্রকৃত অনুভুতি-
ক্ষণিকের বোনা ঠুনকো সম্পর্ক হয়ে ওঠে অনন্য,গভীর,নৈকট্টের ।
আলোছায়া করিডোরে আছড়ে পড়ে যাবতীয় স্যডো-আলোকসজ্জা,
পরের দৃশ্যের অপেক্ষায় দাড়িয়ে থাকে নিশ্চল তেপেয়ো ক্যামেরা ।
ম্যাগাজিনের পাতায় কখনোবা উঠে আসে দৃশ্যকল্পের কামাতুর চিত্র,
কেউ কেউ হারিয়ে যায় আয়না মহলেই নিজেদের বিচিত্র রুপের মাঝে।
ধাতব আওয়াজে ছাপা হয় ব্যথা, প্রযোজকের বিশেষ কৃতজ্ঞতায়,
দৃষ্টিগোচর হওয়ার আগেই তা ঘুরে আসে পোস্টমডার্ন-এর টেবিলে।
রিসাইকেল বিনে লুকিয়ে রাখা স্মৃতিগুলো কখনওবা মনে পড়ে সত্যি-
তবু, পাল্টায় না শিল্পচর্চার ধরনটা কিমবা সংলাপের মেকি সংসার।
ন্যনোগল্পের জীবন বৈচিত্র্য রঙ্গিন সাবটাইটেলে উঠে আসে প্রকাশ্যে,
তা ছাপিয়ে এবার উঠে আসুক”নিঃসঙ্গ”সাদাকালো জীবনের নিগুড় মানে।

কালচার আজ ক্রিস্টালের আলোর খাঁজে

অ্যালকোহলের গন্ধ ছড়িয়ে আছে চারপাশে,
অনুভূতির পর্দায় আজ মাদকতার মাতাল প্রলেপ।
বর্ণময় আলোকসজ্জায় বেড়ে গেছে রুপ সৌন্দর্য বহুগুনে
ঘ্রানের সুতোয় ঝুলে আছে কড়া পারফিউমের নেশাময় গন্ধ।
নিমেষের পরিচয়ে অন্ধ সক্ষতা,দেহের সমর্পণ,সুখের আদান-প্রদান
ঝিমধরা মুখে হাসির স্রোত।

কালচার আজ ক্রিস্টালের আলোর খাঁজে-
রেড ওয়াইনের ঝকঝকে কাঁচের পেয়ালায় ।
শরৎ ,বঙ্কিমের উপন্যাস আর বাংলা কবিতা আজ তাচ্ছিল্যের খোরাক,
কেটে ছেঁটে ইংরেজি শব্দকে লজেন্স বানানো আজ আধুনিকতা।
অখাদ্যের তালিকায় ডাল-ভাত আর শালীনতা ঘিরে বর্ণময় ব্যঙ্গ ।
শ্রদ্ধাবোধ আজ নির্বাসনে- ক্ষমতার উগ্র খেয়ালীপনায় ।

ধর্ম আজ যুক্তি-তর্কের শূন্য ভাগশেষ ,
নাস্তিকতা আজ হালের ফ্যশান ।
অন্ধ-সস্থা বিলাপে কোন প্রান নেই, প্রান নেই সবুজ মাঠে,
প্রান কেবলই যেন অভিজাত পান্থনিবাস আর বিলাসী দ্রব্যে ।
ভালোবাসা আজ বেওয়ারিশ…।
নোনা শরীরে মেশানো আজ ক্রিত্তিম মধু,পরিশোধিত কেমিক্যাল ।
জীবন মানে এখানে সংগ্রাম নয়-
এখানে জীবন মানে- উৎসব, অমৃত স্বাদ আস্বাদন ।

উৎসব এই সূর্যসাগর তীরে

দারুচিনি কিমবা দেবদারু দ্বীপে নয়, উৎসব এই সূর্যসাগর তীরে,
এখানে জীবনের স্পন্দন,বন্দরে বর্ণময় কোলাহল আর ব্যস্ততা ।
দিগন্তের জলসিঁড়ি বেয়ে উঠে আসে অভিলাষী আনন্দ স্বপ্ন,
এখানে অন্ধকার নেই, নেই নক্ষত্রের বিচরন নভোমণ্ডলের কক্ষপথে।
প্যথিওলিথিক যুগ হতে বর্তমান কালের বক্ষে এ উৎসব অব্যহত,
স্থির-ধুম্র নিবিড় পিরামিড সাক্ষী দেয় তার আজও দ্বিধাহীন হয়ে ।

এখানে রয়েছে ভ্রান্তির মোহ, মাটি ,আলো আর জল,
প্রমত্ত ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়ে যায় লালিমা আকাশের আনত বুকে।
এখানে শূন্যতার মাঝে ঝুলে থাকে বিধাতার অমোঘ বিধান,
তৃষিত চোখ আর ক্ষুধার্ত ওষ্ঠধারে কেবলই ভরা জৌলসের কামনা।
লাল গালিচা,সাজানো পসরায় আলোকিত উৎসবের আয়োজন,
সুতোয় বাঁধা বন্ধন,প্রেম,দুঃখ,ব্যথা,রাগ-অনুরাগ এখানে পরিহাস।

এখানে দেবতারা আসে না কখনো পূর্ণ-অপূর্ণতার ইন্দ্রজাল ছিঁড়ে,
আকাশ বানী এখানে এসেছে বারংবার তবু কারো ভ্রুক্ষেপ নেই।
নিঃশব্দে,সশব্দে মৃত্যু এসেছে বহুবার তবুও উৎসব মুখরিত,
বিমূর্ত আকরে চোখ বুজে অনেকেই বিশ্রামে গেছে ক্লান্ত হয়ে ।
একরাশ ঘুটঘুটে কালো অন্ধকারে আচ্ছন্ন সে বিশাল বিশ্রামাগার,
বুভুক্ষু দৃষ্টি উৎসবের আলোতে বন্দী হয়ে মত্ত হয় ফের মোহের আঞ্জামে-
চোরাবালির এই সূর্যসাগর তীরে।।

ব্যথা ক্রন্দন লেখা ললাটে

ঐ অম্বরে ওঠে গম্ভীর সুর,অন্তরে খেদ বিষময়,
যাপিত জীবন জ্বালাময়,চোখে জল আমি অসহায়।
ফের ক্রন্দনে আসে অমানিশা,ঘোর আঁধারের ঘোর ঘোলাটে,
ছিঁড়ি বন্ধন প্রেম বেদনায়, ব্যথা ক্রন্দন লেখা ললাটে।
মধুকুঞ্জের মোহে মধুকারী হয়ে আর রইব না নেশাতুর,
ত্রিনয়নের নেশা মিটাব নিশীথে, বাঁশিতে উঠায়ে সুর।
নাদী-নাদিনীর নাদিত নাদে নন্দিত নাটমন্দির,
দোলে দৈব, দহদী দোসর, দুতিময় দেহ শশধির।
ছুটেছে ত্রিকাল,ত্যজিত তুরগ , তুফানী হাওয়ার তুর্ণি,
মহানন্দের মহড়ায় দেখি-মহাপাতকের চোরা চূর্ণী ।
ঐ লেলিহান লগ্নে লুটায়- লক্ষ লোহিত লুপ্ত প্রান,
শ্রী-বিশ্রী,শ্রাব্য কাব্য পড়ে থাকে শেষে শ্মশান-শ্যাম।
আমি তো আমার, তবু আমার আমিতে রইব না আর বন্দী,
জীর্ণ এ মনে,নব প্লাবনে-ভাসাব সুখের গণ্ডি।
তিমির রাত্রি,বাতি জ্বেলে আমি জেগে থাকি আশা লয়ে,
আসিবে প্রভাত,নিভে যেয়ে রাত- পাখিদের সুরে সুরে।
তবুও কাটে না আঁধারের ঘোর, ফের আকাশেতে মেঘ জমে,
নেচে নেচে ওঠে –নোনা নয়নের জল, বেদনার আঞ্জামে।
শীতল বুকের পেয়ালা ভরেছে-বুদ বুদি দুখ জলে,
উনুনের চেয়ে উষ্ণ হয়েছে- ভাঙ্গা পাঁজরের দাবানলে।
কণ্টকে ভরা কুসুমিত মন, রেনুতে রক্ত বিষ,
ফোটে পঙ্কজ মন সরোবরে, ঘৃত ঘ্রানে-প্রানে তব অনিমিষ ।

নিভে যাওয়া নগরীর বুকে

নিভে গেছে নগরীর সব আলো, নীরব-নিথর-নিস্তব্ধ চারিদিক-
মৃদু কান্না-হাসির শব্দ এসে থেমে গেছে বিষণ্ণ এ জানালায়,
পৃথিবীর ক্লান্ত বুকে শুধু ধ্বনিত হয় ভারি নিঃশ্বাসের শব্দ-
বেদনার প্রবাহিত নদীর কলকল জল ধ্বনি আর কূল ভাঙা আর্তনাদ।

ধূসর পাণ্ডুলিপি আর ডায়েরির পাতাগুলো ভিজে হয় একাকার-
যেখানে গড়া ছিল অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের সেতু বন্ধন ।
মৃত্তিকার গোপন গহব্বর থেকে অঙ্কুরিত বীজের দুর্বল হাতছানি,
সেখানে ভীড় করে কুয়াশার তরঙ্গ আর অচেনা অস্পষ্ট আলো ।

স্পষ্ট আলোর অপেক্ষায় পৃথিবীর ধূলিকণা,ঝরা পাতার কাব্য,
নীলাভ স্বপ্নের ভগ্ন বুকের স্পন্দন লুটায় ব্যকুল ব্যথার পদতলে।
অনাকাঙ্ক্ষিত মুহূর্তগুলো ভিড় করে নতুন উন্মাদনায়,প্রফুল্ল চিত্তে,
নিঃসঙ্গ মলিন ব্যথিত মুখে শ্রাবণের আধারিত নিকষ কালো মেঘ।

ক্ষুধার্ত হাহাকার,আহত অন্ধকার ঘুমিয়ে পড়ে শান্ত হয়ে আকাশ ছুঁয়ে ,
অভিমানী নক্ষত্রপুঞ্জ হারিয়ে যায়-ক্ষীণ বাতাসে, প্রবল মৌন আঘাতে।
দ্যুতিহীন নগরী শুধু দাঁড়িয়ে থাকে বেদনার একান্ত ব্যথিত সাথী হয়ে-
একে একে বন্ধ হয় সব কটা জানালা, সিঁড়ি,চিলেকোঠার অনুপ্রবেশ দ্বার ।

অনন্ত বাসনার পেয়ালা পূর্ণ হয় দুঃখ আর বিষাক্ত তরল সায়ানাইডে ,
অন্তঃপুরে ঝরা ফুল,অলস মন্দির, নগ্ন হাত আর প্রেতাত্মার ছায়া।
নগরীর পথে পথে পড়ে থাকে ধূলিকণা আর ঘুম পথে ভগ্ন স্বপ্নের স্তুপ,
শূন্যতার অপূর্ণ তৃপ্তি আঁকড়ে ধরে আমায়, নিভে যাওয়া নগরীর বুকে।

অতৃপ্ত জীবন

দুচোখের গভীরে- গভীর অপূর্ণতা -
অতৃপ্ত জীবন আজ পরিপূর্ণ –দীর্ঘশ্বাসে,
ভালবাসা এসেছিল তবে তা অস্পষ্টভাবে
হয়তো সত্য ছিল শুধু কল্পনায়।
বাস্তবতা যেন কাঁটার আঘাতে বিন্যাস্ত,
তবুও এ পথ চলা ।

সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বেলে রাতের আঁধার মেনে নেওয়া স্ব-ইচ্ছায়,
জীর্ণ মনে মেনে নেওয়া কষ্টের পারাবার,
পার হওয়ার নেই কোন উপায়-
তবুও খুজে ফেরে চোখ কোন এক দ্বীপের আশায় ।
উত্তাল জলের মাঝে উন্মত্ত ঢেউ-
তবুও বেয়ে চলা এ জীবন তরী।

অব্যক্ত কথামালা শুকিয়ে যায় মনের গহীনেই,
নতুন সূর্যের আলো আসে পুরনো এ জানালায় ।
কপালের পোড়া টিপ ভিজে যায় ঘামে
শিহরন জাগে হৃদয়ের রুদ্ধ দ্বারে ক্ষণিকের তরে-
কোন এক অজানা অন্ধ আবেগে,
কিন্তু মুহূর্তেই শূন্যে হারিয়ে যায় সব।।

অধরা স্বপ্নের অনুকাব্য

স্বপ্ন সপ্নই থেকে যায় ,ধরা যায় না তাকে -
ধরা ছোঁয়ার বাইরে ভিন্ন এক জগতে বসবাস তার ।
কৈশোরের স্বপ্নগুলো উড়ে গেছে দূরে বহু দূরে ফানুসের মত,
লাল নীল সহস্র স্বপ্নেরা আসে শুধুই মরিচিকা হয়ে ।

অঙ্গিকারের আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব পরাস্থ রুপে দেখা দেয়-
দেখা দেয় নিয়তির পরিহাস রুপেও ।
জানি অন্তর্জালে আছে স্বাধীনতা-তবে তা স্বপ্ন ছোঁয়ার নয়-
অক্ষমতার কাছে অসহায় মুক্ত হৃদয় ।

রোদে কিমবা বৃষ্টিতে ভেজার ইচ্ছেটা পূরণ হয়েছে সত্যি-
কিন্তু, ভোরের কুয়াশার শিশির হওয়ার স্বপ্নটা-
আজও সপ্নই থেকে গেছে ,তা হয়নি পূরণ ।
মেলতে পারেনি পাখা এই বাস্তবতার বৃহৎ আকাশে ।

জানি জীবন গল্প থেমে যাবে একদিন,থেমে যাবে পথ চলা -
শেষ হবে হাজারও বর্ণ-শব্দ-কথার খেলা ,
তবু, স্বপ্নের সাথে হবে না সন্ধি-হবে না স্পর্শ এক মুহূর্তও-
শুধু বিদায়ের ক্ষণে হাতছানি দিয়ে জানাব তাকে-
তুমি অধরা, অধরা-ই রয়ে গেলে ।।

আমার নৈসর্গিক ভালোবাসা

সৈর্গিক ভালোবাসা আমি দেখিনি, পাইনি অলৌকিক স্পর্শ,
আমার ভালোবাসা একান্ত আমার নৈসর্গিক রূপে।
অতৃপ্ত আত্মার আহত রুপ দেখনি তুমি বিগলিত চিত্তে,
দেখনি প্রচ্ছন্ন বেদনায় দগ্ধ স্পর্শকাতর আকুলতা।
জানি,সব আকুলতার মানে বুঝতে নেই,তবু কেন এত আক্ষেপ?
কেন এত প্রেমাবেগ অবুঝ হৃদয়ের এই জীর্ণ কুঠিরে।
জানি হবে না পরিণয়, একটুখানি স্পর্শও -
তোমার আমার মাঝে যে বৈষম্যের মস্ত আধারিত দেয়াল।
আমার স্বপ্নগুলো নক্ষত্রের মত জ্বলে উঠে নিভে যায় নিমেষেই,
মলিন মাটির বুকে আমি দাড়িয়ে দেখি শুধু লুকোচুরি খেলা।
অহর্নিশ ভালোবাসা বেদনার আলিঙ্গনে হয় দিকভ্রান্ত,
অবরুদ্ধ অশ্রুর কাব্য কেবল জানে আমার অন্তর্যামী ।
জানি প্রতীক্ষার পালা শেষ হবে না কোনদিনও,
তবুও, তোমার হৃৎপিণ্ডের পাশে রইব আমি বায়ুবীয় হয়ে ।।

শ্রদ্ধার স্মরণে "বাবা"

নিঃস্বার্থ উদারতার আকাশে দেখেছি তোমারে,
হে মহা প্রান-একটি প্রণাম জানাই তোমার তরে।
দেখিনিকো দেব,দেবতার হাত,দেখিনি খোঁদার আসন,
শুধু,দেখেছি ধরাতে-তোমার চোখেতে-বুকে যা করেছ ধারন।

সাত সিন্ধুর প্লাবিত জল, আছে পর্বত হিমালয়,
আছে সে অনড় পাহাড় চূড়া , ভক্তির দেবালয়।
দ্যুতিমান এক আলোকে করেছ দিনের উদ্ভাসন,
দেখেছি দহন,নীরব সহন,চেপে রাখা ক্রন্দন।
ক্লান্তির পায়ে দলেছ বিলাস,তুচ্ছ করেছ দুঃখ,
রুক্ষ করেছ নিজ জীবনের কোমল প্রভাতী-গুচ্ছ।
অভিসারি হয়ে হেঁটেছ সে পথে,যে পথে বিষের কাঁটা,
তবু,বুলায়ে দিয়েছ-কোমল পরশ,বুঝতে দাওনি ব্যথা।

ক্ষত বিক্ষত হয়েছ নিজেই,সয়েছ নিন্দা-গ্লানি,
তবুও নিপুণ-সাজিয়েছ নীড়, হয়েছ পরিত্রাণী ।
বুকের রক্ত ক্ষরণ হয়েছে দৈন্য-জরার ঘাতে,
তবুও মাথা নুইয়ে পড়েনি কষ্টের কষাঘাতে ।
শুধু গড়ে গেছ অটল হয়ে-আগামী দিনের তরে,
রচে গেছ প্রেম নীরবে,নিভৃতে-ভাঙা পাঁজরের ঘরে।
আত্মত্যগের মহিমা তুমি দেখায়েছ ধরাময়,
লক্ষ বীরের সেই মহা বীর,তোমাতেই খুঁজে পাই।

দেবতার হাত দেখেছি ধরায়, তোমারই প্রানের প্রেমে,
বঞ্ছিত মুখে হাসি ফোটে তব,তোমার অমোঘ ত্রানে ।
হে মহা ত্যগি,আমি অনুরাগী, আজ স্মৃতিতেই বিস্ময়,
জল আসে চোখে, গভীর আবেগে, মম শীর তব নত হয় ।

প্রতিবিম্বের বিবর্ণ কাব্য–৯

বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০১৪

নিত্য খুঁজে ফেরা প্রশান্তির ভোর চুরি হয়ে গেছে অনেক আগেই আমরা বুঝিনি। কেবলই ছুটে চলেছি মরিচিকার পিছে। যেন পিছন ফিরে তাকানোর সময় নেই। কেউ কেউ পিছনে তাকিয়ে হারিয়ে গেছে। তাদের কেউই আর ফিরে আসেনি। আশা,প্রত্যাশা আর স্বপ্নের জাল বুনে বুনে আমরা এগিয়ে চলেছি আঁধারের অন্ধ পথ ধরে।

কিছু দুর্নিবার শব্দ কথারা দুর্গ গড়েছে এই পথের বুকে। আমাদের কেউ কেউ এই সব দুর্গে বিশ্রামরত। কেউ কেউ তা উপেক্ষা করে অব্যহত রেখেছে যাত্রা। সব পতঞ্জলি হারিয়ে গেছে পাদবিক পদতলে। সবাই যেন অপ্রতিরদ্ধ প্রত্যয়ী প্রতিরথ।

আরও ঘনীভূত হল অন্ধকার। ম্রিয়মাণ যে আলো জ্বেলে এতটা পথ পাড়ি দিয়েছি তা নিভে গেল। তারপর দিকভ্রান্ত হল অনেকেই। কেউ কেউ ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেল। শুধু আমরা কয়েকজন রক্তমাখা বিষণ্ণ ভোরের খুব কাছাকাছি পৌঁছলাম।

প্রতিবিম্বের বিবর্ণ কাব্য–৮

অন্তঃনগর ষ্টেশন থেকে যাত্রীবাহী একটি ট্রেন ছেড়ে গেছে একটু আগে। আমি প্লাটফর্মে দাড়িয়ে আছি। আশেপাশে তেমন কেউ নেই। টোকাই আর ফেরিওলাদের অনেকেই চলে গেছে, আর যারা আছে তারা গুটিসুটি মেরে বসে আছে এখন।

একজন বৃদ্ধ শুয়ে আছে প্লাটফর্মের এক কোনে। মৃদু কাশির শব্দে দৃষ্টিগোচর হল।পরনে তাঁর জীর্ণ কাপড়। দুচোখ ভরা গাড় বিষণ্ণতা। আমি এগিয়ে গিয়েও আবার পিছিয়ে এলাম। তাকিয়ে রইলাম ট্রেন লাইনের সমান্তরাল পাত ছোঁয়া দিগন্তে। সেই দিগন্ত ছুয়ে আসা উদাসী বাতাস আমাকে কিছুটা উদাসী করে দিল।

ফিরে এলো ট্রেনটি শূন্য হয়ে সশব্দে। ঘোর কেটে এলো আমার। ইতিমধ্যে অসংখ্য মানুষের ভিড়ে ভরে উঠেছে প্লাটফর্ম। সবার মাঝেই ব্যস্ততা শুধু বৃদ্ধ লোকটির কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। আবার চলে গেল ট্রেন।থেমে গেল ব্যস্ততা।আশেপাশে তেমন কেউ নেই। আমি বিশ্রাম নিচ্ছি। শুন্য প্লাটফর্মে দেখি শুধু কতগুলো মাছিদের ব্যস্ততা বৃদ্ধ সেই লোকটিকে ঘিরে।

প্রতিবিম্বের বিবর্ণ কাব্য–৭

ঘরের শোভা বাড়াতে শখের বসে আনা হল পাথরের এক ফুল। এক দুই তিন করে বৃদ্ধি পেতে থাকল মানুষের সৃষ্ট কৌতূহলের জন্য। উৎসুক অনেকেই দেখে মুগ্ধ হল। সৃষ্টি হল পাথর বাগান, যেখানে শুধু পাথরের ফুল। মানুষের ভালোবাসা বন্দি হতে থাকল পাথর ফুলে। ছড়িয়ে পড়ল পাথর ফুলের চাষ।

শুরু হতে থাকল সত্যিকার ফুল নিধনের প্রতিযোগিতা। চারিদিকে কৃত্রিম ফুলে ফুলে ভরে গেল, যার কোন গন্ধ নেই, কোমলতা নেই। ক্রমেই হারিয়ে গেল সত্যিকার সব ফুল শুধু অবশিষ্ট রইল একটি গোলাপ।

অতঃপর টিকিট কেটে দেখা শুরু হল সেই গোলাপটি। গোলাপ কেন্দ্রিক মানুষের সমাগম বাড়তে থাকল তাই তৈরী হল চারিদিকে কঠোর নিরাপত্তার বেষ্টনী। কেউ আর ছুঁতে পারল না গোলাপটি। গন্ধ নেওয়ার চেষ্টাও বৃথা হল কারন পাথর মন ঘ্রানশক্তিহীন।

প্রতিবিম্বের বিবর্ণ কাব্য–৬

জাগতিক ঘড়ির কাঁটা থমকে দাড়িয়ে গেল। এগোতে পারল না আর। অনুভূতির দরজা একে একে বন্ধ হয়ে গেল সব। বন্দি হয়ে গেল হাওয়ায় ভাসা সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না, গান, আনন্দ, বিস্ময়, অভিমান। কোন কিছুই স্বাধীন রইল না আর। মন হয়ে পড়ল অনুভূতিহীন, নিস্তেজ,অসাড়।

প্রেম স্তব্ধ হয়ে পড়ল নিমেষেই। বন্ধ হল পাখির ডানায় স্বপ্নের ওড়াউড়ি আর সভ্যতার রঙ পরিবর্তন। আর কোন কামনা জাগল না মনে। সন্তর্পণে হেঁটে চলা লালসা ঘুমিয়ে গেল নিঃশব্দে। নিভে গেল সব আলোক রশ্মি বিদ্যুৎ গতিতে।

সমস্ত ঘড়ি হারিয়ে গেল, শুধু একটি বিশাল ঘড়ি টিক টিক শব্দে শুরু করল সময়। ঘুম ভেঙ্গে গেল সেই শব্দে। বিস্ময় চোখে তাকিয়ে দেখি সবই অচেনা, অজানা এক অনুভুতি।

প্রতিবিম্বের বিবর্ণ কাব্য-৫

একটি ছায়ামূর্তির নজর বন্দীতে আমি। চোখের আড়াল হওয়ার নেই কোন উপায় । আজন্ম নজরবন্দী আসামি হয়ে চলেছি ছুটে। কখনও বা ধীর-কৌশলে আবার কখনও বা ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে গিয়ে দাঁড়াতেই সামনে এসেছে তার অবয়ব ।

এক বুক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জিজ্ঞেস করি কি তার চাওয়া। কোন উত্তর মেলে না, কেবলই প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে নিজের প্রশ্ন । একি প্রহেলিকা নাকি প্রহসন ? প্রশ্নবিদ্ধ হই নিজেই। ক্রমেই বেড়ে যায় অলক্ষের অনুভুতিক জগৎ। দ্বিধা-দ্বন্দ্বের কাছে পরাজিত হই বারং বার ।

অতঃপর একদিন দেখি হারিয়ে গেছে ছায়াটি । অবশ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে তাকিয়ে দেখি, খুঁজে ফিরি তাকে। তবুও মেলে না । ভেবে দেখি আজ সত্যিই মিলেছে পরিত্রাণ। তবে এ পরিত্রাণ স্বস্তির নয়,কেবলই অস্তিত্ব বিলীনের ।

প্রতিবিম্বের বিবর্ণ কাব্য-৪

রাতের বিষন্নতা চলে গেছে নির্বাসনে । নিশাচর পাখিরা অন্ধকারে ভীত-সন্ত্রস্ত । দিনের আলোতে তাদের অবাধ বিচরন ।পালিয়ে এসেছে আলোতে জোনাকির দল । শিশির পড়ে না সকালের সবুজ ঘাসে ।ঘুম ভাঙা ভোরে যেন সবাই ঘুমিয়ে পড়ছে।

এক দল প্রজাপতি খেলা করে রাতের অন্ধকারে ।হায়েনার চোখে উন্মত্ত উন্মাদনা, প্রফুল্লতার ফোয়ারা । চাঁদের আলোয় স্নান করে কুনো ব্যঙেরা । নিকষ আঁধার ভিজে যায় রংধনুর বিচ্ছুরিত রঙে ।

অতঃপর শিশির ঝরে। সকালে সবুজ ঘাসের উপর জমে থাকে রক্ত বিন্দু ।সূর্য ওঠা সকালের কোমলতা হয় ফেরারি । দিনের আলোয় চোখ মেলে তাকায় ক্লান্ত হায়েনারা। ঘুমিয়ে পড়ে প্রজাপতির দল।অন্ধকার বন্দী করে সূর্যকে। সূর্যগ্রহণেই কেটে যায় বেলা ।

প্রতিবিম্বের বিবর্ণ কাব্য-৩

আমি হেঁটে যাই , হেঁটে যাই ভাঙা পাথরের পথ ধরে অভিসারী পথিক হয়ে । নিষ্প্রাণ সে পথ বলে না কোন কথা । চারিদিকে কৌতূহলী অদৃশ্য সব চোখ। রহস্যের জালে বিন্যস্ত পৃষোদরী কাল।

আশৈশব বিস্ময়ী এ যাত্রায় যেন কোন ক্লান্তি নেই। তবুও,ক্লান্তির দৈর্ঘ্য মাপা পড়ে কালের গজে । হেঁটে গেছে আরও অনেকেই এই পথের বুকে ভর করে। পড়ে থাকা সে সব চিহ্ন আমাকে দেখে হাসে বিদ্রূপের হাসি । শুধু ঝরা পাতারা কাঁদে নীরব বেদনায়।

তবুও, হেঁটে চলি আমি সম্মুখের পথ। শেষ প্রান্তে এসে কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে দেখি- কথা বলে শূন্য সে ভাঙা পাথরের পথ ।গভীর এক রহস্য ভর করে আমার চোখের আঙিনায় । আমি আর পথিক নই। যেতে পারি না আর ঐ পাথরের পথে। আজ আমি নিজেই এক মস্ত পাথর।

প্রতিবিম্বের বিবর্ণ কাব্য-২

আমি বসে আছি । অপেক্ষা করছি অর্বাচীন পাখির একটি পালক হাতে। অপেক্ষার মুহূর্তগুলো বেড়েই চলেছে । আর, ক্রমশই কমে আসছে প্রদীপের জ্বালানি,ভেজা সলতের দীর্ঘতা।
বাইরে প্রচণ্ড উত্তাপ। কিন্তু ভেতরটা ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে। স্যাঁতস্যাঁতে শ্যাওলায় পা পিছলে পড়ে যায় সাবধানী অনুভূতি। দুচোখে ভেসে উঠছে সাদা কুয়াশার এক চাদর। পথ ভোলা বাতাস এসে দিয়ে যায় এক ক্লান্ত পরশ।
আমি অপেক্ষা করছি । অপেক্ষা করছি আন্মনা,উদাসী হিমেল বাতাসে। অতঃপর দেখি পালকটি হাতে নেই । আমি শূন্য হাতে বসে আছি শূন্যতার পানে চেয়ে ।

প্রতিবিম্বের বিবর্ণ কাব্য-১

ঘুমন্ত চোখের শুভ্রতা কেটে গেছে একটু আগে । পরিত্যক্ত পথে শুরু করেছি যাত্রা। কৃষ্ণ নেত্র হতে কৌতূহলী দৃষ্টি ছড়ায়ে পড়েছে চারিদিকে। পথে পথে পড়ে আছে পুরনো পায়ের  চিহ্ন । তবুও কোথাও কেউ নেই ।
প্রাচীন প্রতিবিম্ব দেখা যায় শেওলা পড়া প্রাচীরে। প্রাচীরের ওপারে যাওয়ার কোন পথ নেই। কল্পনার এক মেঘদূত পাঠিয়ে দিয়েছি এখানে এসে। হয়ত সে মেঘেরা দিকভ্রান্ত হবে-দিক বিদিক ছুটে। শুধু একা আমি দাড়িয়ে থাকি এখানে।
কৌতূহলী দৃষ্টি চেয়ে রয় ফিরে আসা সে মেঘের অপেক্ষায় । ধ্বনিত হয় পথে পথে পদধ্বনি। চারিদিকে অসংখ্য মানুষের ভিড়। আমরা সবাই অপেক্ষায় দাড়িয়ে।

এ কেমন চাওয়া...

এ কেমন চাওয়া না পাওয়ার মাঝে?
এ কেমন টান ছিন্ন বাঁধনের মাঝে ?
এ কেমন সুখ বেদনার বন্ধনে ?
কেবলই সত্য খুঁজে ফেরা মনের কল্পনায়,
কেবলই আশা করা অন্ধ নিরাশায়।

ব্যর্থতার বিজয়ে পরাজিত এ হৃদয়,
কেন পূর্ণ হয় মন শুধুই শূন্যতায়,
নিশ্চুপ, স্থির একাকী সময় কাটে অস্থিরতায়,
বুকের স্বপ্নগুলো গড়ে উঠে-চূর্ণ হয় বার বার,
ফেরারি অভিমান খুঁজে পায় ঠিকানা ।

তবে কি শুরুতেই হবে সব শেষ?
সূর্যগ্রহণেই কি কেটে যাবে বেলা?
জীবন কি ঐ সোনার খাঁচার স্বর্ণকুঠিরে বন্দী?
নাকি বেড়ী পায়ে মুক্ত আকাসে ঝাপটানো ডানায় ,
ভাঙ্গা মনে কোথায় খুঁজি সাজানো নীড় ?

জানি বেলা শেষে ঘোর আঁধারের সূচনা,
বিষাদের শুরুতে ছিল অনুরাগী প্রেম,
করুন বিরহের সুর বাজে মিলনের মাঝে,
ঝিলিমিলি রোদ্দুর আড়াল করে মেঘ,
কেন উষ্ণ মরুর বুকে খুঁজি বহতা নদী।

ঘর মুখী পথিকেরা পথ হারায় পথে,
শুভ্র সময় মিশে যায় ক্রান্তিকালে,
ফিরে আসে ধূসর অতীত বর্তমান সৃতি চারণে,
নানা রং মিলে মিশে সাদা হয়,
তবু কেন খুঁজে ফিরি রঙ্গিন জীবন ?

নীরব অনুভূতির ঘোরে হারিয়ে যাই

অন্তহীন ব্যথিত আবেগ জেগে থাকে সারারাত-
অভিমানী নিভৃতে পাড়ি দেয় কষ্টের নীল সাগর।
ক্লান্ত নেশাময় অনুভুতি পড়ে রয় এক পাশে -
আর- স্বপ্নগুলো অবহেলায় নিশ্চুপ স্তব্ধে আবরিত ,
হৃদয়ের সীমান্তে এসে ভিড় করে অদ্ভুত সব যন্ত্রণা।

কেটে যায় দিন অন্ধকার রাতের আচ্ছন্নতায়-
মহাজাগতিক ধুলোমাখা চাকায় এগিয়ে চলে সময়।
অনুভবে মিশে থাকা শূন্যতা আরও জাপটে ধরে-
নিঃশব্দে অপেক্ষমান মুহূর্তগুলোর সাথে মিশে থাকে ক্রন্দন,
নিত্য চলে অব্যক্ত কথার লুকোচুরি খেলা।

আমৃত্যু হেঁটে চলে বিষণ্ণ মৌন এক মিছিল-
জাগ্রত বেদনার সাথে শামিল হয় দুঃখেরা।
নীল পর্দার আড়ালে লুকিয়ে থাকে না যেন আর কেউ-
প্রেত্মাত্তা সুখ শুধু আড়ালে লুকিয়ে দেখে সব,
শুধু মেঘ জমে, ঝড় ছুটে এসে থেমে যায় এই পথে।

স্মৃতির ভাঁজে জমে থাকা দগ্ধ ব্যথা বের হয়ে আসে-
স্বচ্ছ কাঁচের মত জোছনায় মিশে তা ঘোলাটে হয়।
কেবলই একাকীত্বের নীলে ডুবে যাই-ফের ভাসি -
অপূর্ণতা থেকে থেকে চিৎকার করে ওঠে নিজের ভেতর,
নীরব অনুভূতির ঘোরে হারিয়ে যাই আবার।

জীবনের আরও একটি নাম দুঃসহ যন্ত্রণা

জীবনের আরও একটি নাম দুঃসহ যন্ত্রণা-
স্ফুলিঙ্গের মত কখনও রুপ তাঁর ,
কেবলই নষ্ট অতীত আর সমসময়ের তীব্র জালাময় কষ্টের ঘনঘটা-
ঘূর্ণিপাকের এই জীবন চক্রে ।
সম্পর্কহীন সীমাহীন শূন্যতায় হারিয়ে আবার ফিরে আসা-
এই ক্রান্তিময় কুলষিত কালের কোলে ।
রূপালী আলোর পরাস্থ মলিন মুখে-
অব্যক্ত আভিসাপের নগ্ন রূপরেখা আর ভৎসনা ,
নিকষ আঁধার থমকে দাঁড়ায়-প্রবাহিত প্রমোদহীন অকুল পাথারে
ছোট্ট দীর্ঘশ্বাসে আরও দীর্ঘ হয় দিকভ্রান্ত মাঝির উন্মত্ত দরিয়া ,
গর্জে উঠে থেমে যায়-
ভীরু সুখেরা হারিয়ে যায় নীল বেদনার ঈষৎ নীল আভায় ।

মিশে আছি তোমার অস্তিত্বে

নয়নের নোনা জল মুছে ফেল প্রিয়-
মিছে কেন ফেলিছ ও শুভ্র আঁখিজল ?
চেয়ে দেখ ঐ নীল তেপান্তরে-
চেয়ে দেখ আকাশ পানে,নক্ষত্র বীথির পুঞ্জে পুঞ্জে-
এই তো আমি আছি তোমার চোখের আঙ্গিনায় ,
নিবিড় মায়ার বাঁধনে ।
তবে কেন মিছে খুঁজে ফের বারে বার।
কেন হৃদয়ের শূন্যতা ভাসাও দু চোখের মণিকোঠায়,
কেন গুমড়ে কেঁদে ওঠো -
কেন দীর্ঘশ্বাসে কাঁপাও বুকের পাঁজর ?
কেন অশান্ত করে তোল নিজেকে ?
একটু শান্ত হও অমৃতোপম ।
সন্ধার ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি ধারায়-
স্নিগ্ধ সকালের লাজুক রোদে,হিমেল হাওয়ায়-
ঐ-শীতের কুয়াশায় কিমবা বকুল ফুলের ঘ্রানে-
আমি মিশে আছি তোমারই হয়ে ।
চোখ মেলে তাকিয়ে দেখ আর একটি বার ,
আমাকে খুজে পাবে-তোমার অনুভবের সীমানায় ।
হয়তো পাবে না একটু খানি স্পর্শ
কিন্তু অনুভবের অস্তিত্বে চেয়ে দেখ-
আছি,আমি আছি তোমার মুগ্ধতার আঞ্জামে,
একটুখানি চেয়ে দেখ-
আমি বেমালুম ভুলিয়ে দেব সব ব্যথা।
ভরিয়ে দেব তোমার অতৃপ্ত হৃদয় ।
নীরব অভিমানে নিজেকে গুটিয়ে রাখবে আর কত ?
কত বিষণ্ণতায় পূর্ণ করবে অন্তর্যামী?
প্রিয়, ব্যথার রুদ্ধ-বন্দি কক্ষে থেকনা বসে আর,
আলোর পানে ফিরে চাও ।
রাতের মৌনতার মাঝে একাকী হারায়ো না তুমি-
করো না বিষাদে অবগাহন ।
যে অভিমানে তুমি লুকায়েছ মুখ-
সে অভিমান কি নেই আমার ?
অন্তঃপুরের শুভ্র বাসনা কি কেবল তোমারি ছিল?
তা ছিল না আমার ?
নিজেকে কষ্ট দিয়ে কেন আঘাত করছ আমাকে,
আমার অশ্রুজল কি তুমি দেখতে পাও না ?
নিয়তির নির্মম পরিহাসে আজ আমি স্পর্শের বাইরে
এপার ওপার ভেদ করেছে অদৃশ্য এক প্রাচীর ।
কিন্তু আমি প্রতিটি ক্ষণে মিশে আছি তোমার অস্তিত্বে,
কেন মিছে ভাবছ তুমি একা ।
নিরঞ্জন ভালবাসার হয় না মৃত্যু,
মধুমিতা, অনুভুতির চোখ মেলে চেয়ে দেখ ।
আমি আছি তোমারই পাশে,থাকব অনন্ত কাল ।

বিপদের প্রতিধ্বনি

বুধবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০১৪

চারিদিকে বিপদের প্রতিধ্বনি,অস্থির অশনি সংকেত-
হৃদয়লোকের শুভ্র বাসনা বিলীন হয় ক্ষণে ক্ষণে।
বীভৎস বাস্তবতা সম্মুখে এসে দেখা দেয় বারংবার,
প্রত্যাশা আজ প্রতি পদক্ষেপে লাঞ্ছিত।
হৃদয়ের বন্দরে বন্দরে বিপদ সংকেতের ধুম্রজাল-
অস্থির নিঃশ্বাসে প্রকম্পিত আকাশ,বাতাস, পৃথ্বীতল।
সস্থির আশ্রয়ে লেগেছে ঘাতক ঘুণের পোকা,
নিরঞ্জন বাতাসে আজ মিশে গেছে জ্বালাময়ী বিষ।
ভেঙে গেছে মাস্তুল-পাটাতন,ছিড়ে গেছে পাল-
উন্মাদী বাতাসে বেসামাল কাণ্ডারির সুদৃঢ় হাত।
তুফানের শঙ্কায়- শঙ্কিত, অসহায় আজ প্রান,
নিরানন্দের উন্মত্ত নৃত্যে মুখর চারিদিক।
অন্তপুরের নীড় বাঁধা নিষ্কলঙ্ক পাখি উড়ে গেছে-
ছেড়ে গেছে মনের বিধ্বস্ত উপকূলীয় সীমানা থেকে।
অনুভবের অস্তিত্বে আজ শুধুই বিষাদগ্রস্থের পরিব্যপ্তি,
বিপদের প্রতিধ্বনিতে- ধ্বনিত আজ চারিদিক।

বিনম্র শ্রদ্ধাভরে স্মরণ

সিন্ধুসম মায়াময় আঁচলের স্নেহতলে এসেছি মাটির এ-প্রান্তে
মমত্বের বাহুডোরে তুমি রেখেছিলে জড়ায়ে গভীর আবেগে
প্রদীপের মত শিহরের পাশে জ্বলেছ রাতের নিকষ আঁধারে ।
তোমার ছোঁয়ায় জড়ানো ছিল ভয়হীন কোমল প্রশান্তি ,
তোমার আঁচল ছিল আকাশ ঢাকা সঞ্জীবনী মেঘমালা ।
আমার অস্তিত্বের প্রতিচ্ছবি ছিলে তুমি-
তোমার নিবিড় আশ্রয় – গর্ভ থেকে ভূগর্ভ সীমাহীন ।
তুমি প্রেমময়ী,তুমি কল্যাণী, তুমি শাশ্বত- চিরন্তন,
তোমাতে আমাতে এক হয়ে মিশে ছিল প্রতিটি স্পন্দন
আমি ভুলতে পারিনি।

ধরার ধূলিতে তুমি রচেছ স্বর্গ ,
শত দুঃখ, দৈন্য, ক্লেশ লুকায়ে একটু খানি চোখের জলে-
স্নেহে গড়া সুখ দিয়ে তুমি মিটায়েছ নিখিল এ বিশ্বের আবেগী তিয়াসা ।
হয়তো তোমার হৃদয় জলে ভিজে যেত ধু-ধু-মরু প্রান্তর-
উথলি উঠিত সাগর, নদী- সব কূল ছাপায়ে ।
তুমি বুঝতে দাওনি কখনও ।
তোমার নীরব সহন বদনে তাই আমি দেখেছি শুধু আনন্দ -
দেখেছি সোহাগে তৃপ্ত আলোকিত আঁখি ।
নীরব ক্রন্দন সে শুধু তুমি-ই জানো , আর জানে স্রষ্টা।

মাগো- নিবিড় শেকড়ের টান,মায়ায় ভরা সজল বীথির ঘ্রান-
আলোকিত সূর্য, নক্ষত্রবীথি আর রক্ত বিন্দুর সকল বিন্দুকনা থেকে
তোমাকে জানায় বিনম্র অনন্ত শ্রদ্ধা, পুঞ্জিত ভালবাসা ।।

কৃতজ্ঞতা

মৃত্তিকার গন্ধ লেগে আছে নাকে-
অন্তরের অন্তঃস্থলে বিশ্বাসের বলয়,
সব দাম্ভিকতা বিলীন হয়ে যায় এক মুহূর্তেই-
তবু কেন কাঁপে না প্রান ?
কেন নত করি না মাথা শ্রদ্ধা ভরে ?
আজ আর একটি বার নিজেকে জিজ্ঞেস করি-
কিসের এত অহংকার?
মিথ্যে অহংকারে পুড়ে পুড়ে শেষ হবে একদিন-
শেষ হবে সব, শেষ সত্য প্রনয়ে ।
যে সুর এসেছে কণ্ঠস্বরের সীমানায়,
যে আলো,যে বাতাস এসে দোলা দেয় হৃদয়ের আঙিনায়-
তার উৎস কোথায় ?
জানি, তবু কেন অকারণ চাওয়া ?
কেন নিজেকে মুখোশের অন্তরালে গুটিয়ে রাখা?
এসো আরও একটি বার বুক ভরে শ্বাস নিই,
নিমগ্ন হই পরিতিপ্ত প্রশান্তিতে ,
কৃতজ্ঞতা প্রদান করি – ঈশ্বরে ।
সকল প্রশংসা সে তো তাঁর-ই জন্যে ।।

কালের বিবর্তন

অদৃশ্য অন্তহীন চক্রে ঘূর্ণায়মান কালের দৃশ্যপট,
নতুন সূর্যোদয় যেন মহাকালের নব পরিক্রমা।
আলোকিত চারিদিক কিন্তু তার নিচে চাপা পড়ে আছে নিকষ অন্ধকার-
বিবর্তনের বর্ণ গুলো আজ বড় এলোমেলো, দিকভ্রান্ত।
হয়তো আশীর্বাদে নয়তো অভিশাপে সৃষ্টি এ ধরার ধুলি,এক মহা প্রাচীর-
সে প্রাচীরের এ পাশে প্রহেলিকার আনাগোনা।
বাতাসে মিশে আছে মোহ ভ্রান্তি আর কলুষিত প্রতিধ্বনি
মিশে আছে স্পষ্ট অস্পষ্ট উন্মত্ত উন্মাদনার সুর।
হয়তো আদিম দেবতারা এসে ফিরে গেছে-
ফিরে গেছে পৌরাণিক সেই ভূখণ্ড কিমবা সমুদ্রপৃষ্ঠের আবাস থেকে ঈশ্বর।
অসহ্য ধংষজজ্ঞ, উন্মত্ত-উন্মাদনাময় নৃত্যের উচ্ছৃঙ্খল আঞ্জামে-
হয়তবা ফিরে গেছে লাজে,রাগে,খোবে,অভিমানে।
বিন্দু বিন্দু ঘাম, হাজারও মাথার খুলি আর পাঁজরের হাড় গুলো সব মিলিয়ে গেছে -
মিলিয়ে গেছে ঐ সুদুরে নক্ষত্রের মাঝে।
হয়তো তিমির অন্ধকারে সেই সব মৃতদেহের আত্মা ফিরে আসে -
কালের আঁধারিত প্রান্তে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
জোনাকির নীলাভ দ্যুতি ছড়ায় রাতের আঁধারে এ ভুবন তলে,
সূর্যরশ্মি আর স্ব স্ব- অস্তিত্বের শক্তি ঘটায় কালের ক্রমবিকাশ, বিবর্তন।
সুউচ্চ বরফ চুড়া গলে গলে মিশে যায় রহস্যময় মহাসাগরের সাথে-
পাঁজর ভাঙ্গা হাড় কঙ্কাল মিশে যায় মায়ার এ মৃত্তিকায়।
সময়ের রথে চড়ে এসেছে সভ্যতা, এসেছে ক্রান্তিময় বিবর্তনের মধ্য দিয়ে
নিরবিচ্ছিন্ন অভিযোজনে উপনীত আজ আমাদের জীবনধারা,
তবে তা শাশ্বত কল্যাণের নাকি বিপন্নতার আয়োজনে?
শূন্যতায় মিলিয়ে যায় সে প্রশ্ন, মেলে না উত্তর।
সভ্যতার চরম শিখরে উঠেও আজও আমরা খুঁজে পাই-
ঘাসের শিশিরের সাথে মিশে থাকা মানুষের রক্ত।
যে মশাল দিয়ে আলোকিত করেছিল গুহাবাসী তাদের আবাসস্থল-
সে মশাল দিয়েই আজ আমরা পুড়িয়ে দিই আমাদেরই ঘর ।
নিষ্পেষণ,জুলুমের শূলে চড়িয়ে আমরাই মত্ত হই-
মহা আনন্দের অন্ধ, বধির, নির্মম উল্লাসে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে।
হাজারও মৃতদেহের উপর দাঁড়িয়ে করি উন্মত্ত নৃত্য,
ভয়ে কাঁপিয়ে দেই জল্লাদের পাষাণী বুক।
রক্ত পিপাসু হিংস্র জানোয়ারের মত আজ আমরাই-
খুবলে খাচ্ছি মানুষের বুক, চুষে নিচ্ছি মানুষের রক্ত।
সহস্র আজরাইলের রুপ ধারন করছি এই আমরাই-

তবুও আমরা পরিচয় দিচ্ছি আমরা মানুষ, আমরা সভ্য জাতি!!

ভালোবাসা-সে তো মরিচিকা

শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৪

কেটে গেছে কত বিনিদ্র প্রহর-
আজও নিস্তব্ধ আঁধারে জেগে থাকি
শীতল নির্লিপ্ত মগ্নতার অপেক্ষায়-
আঁধারের মায়াবী স্পর্শের তীব্র আকাঙ্ক্ষায় আর-
ভালোবাসার কোমল চাদরের একটুখানি আশ্রয় পেতে,
তবে তা কোন- উড় ভাবনায় নয়, সত্য প্রত্যয়ে ।

রাতের অন্ধকারে রাত জাগা তাঁরাদের আলোকিত উপন্যাসের মাঝে-
দেখতে চেয়েছিলাম তোমায় আমি,
কিন্তু, মিথ্যে অহমিকায় লুণ্ঠিত হয়েছে স্বপ্নগুলো
আজ-সপ্নহীন আঁধারে মুখ গুজে হারিয়ে যায় আমি ।
আলিঙ্গনের বাসনা আজ মিলিয়ে গেছে-
কোন এক অজানা বিষাদের স্রোতধারায় ।

মোহ থেকে ভ্রান্তিতে প্রত্যাবর্তন সেই প্রেমের,
বুকের কষ্টগুলো আজ কণ্ঠনালীতে এসে থেমে যায় -
তাই- আজ আমি নির্বাক ।
ভালোবাসা – সে তো মরিচিকা-
কখনও বা ভেসে ভেসে উড়ে যায় মেঘেদের দেশে,
আমি ছুঁতে পারিনি কখনও -
আজ শুধু অশ্রু ধারায় সিক্ত হয় মনের বালুচর ।।