ছেড়া পাতার কাব্য (মর্মর-২)

বুধবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৪

ভেসে আসে বেদনা বিধুর সুর-
যা ঝরা পাতাদের কান্না,আসে উদাসী বাতাসের অদৃশ্য বাঁশি থেকে,
ম্রিয়মান আলোর মাঝে ক্লান্ত ধূসর ছায়া পড়ে যা গন্ধহীন,অস্পর্শী
এখানে খুঁজে পায় ওরা অমরত্বের স্বাদ,দ্বিধাহীন চলার পূর্ণ স্বাধীনতা
তবুও আক্ষেপে কেটে যায় বেলা,আকুলতা শুধু প্রানের স্পন্দনের।
অন্ধকারের মাঝে লুকাতে পারেনা ওরা, ক্ষণে ক্ষণে কেঁদে ওঠে স্বরে-
জোনাকিরা দিয়ে যায় আলো, দিয়ে যায় সমবেদনার সাতকাহন
তবুও প্রলম্বিত হয় দুঃখ বোধ গাড় অন্ধকারের মলিন কিনারায়।
আবার পথ চলা এক বুক বিষণ্ণতা সাথে নিয়ে নিরুদ্দেশের পথে
ক্ষণে ক্ষণে ভেসে আসে অস্পষ্ট আর্তনাদ, মানুষের ব্যথিত আবেগ।

এখানেও ব্যথা ঝরে! ছিড়ে যায়- স্বপ্ন সুতো, বন্ধন, অদৃশ্য মায়া,
তাই নিস্তব্ধ, নিঃসাড়, ঝরা পাতার দল, বিস্ময় চোখের আঙ্গিনায়।
শুধু ব্যথা না, মানুষও ঝরে যায় জীবনের শাখা হতে চির দিনের তরে,
কখনো আসেনা ফিরে এই পথে আর তাই এখানেও হাহাকার ওঠে।
অব্যক্ত কথার আড়ালে থেকে যায় আরও কিছু প্রশ্ন, কিছু বিস্ময়,
থেকে যায় কিছু নোনা স্বাদ, কিছু অর্থহীন বাক্যের অতৃপ্ত আনাগোনা।
বোবা সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র গুলো শুধু নিশ্চুপ সাক্ষী থাকে এই দৃশ্যের,
স্তদ্ধ চোখেও জল আসে তবে তা অদৃশ্য, অস্তিত্ব যার শূন্যতায়।

উপলব্ধির চাদরে বাসা বাঁধে সান্ত্বনা আর কিছুটা বিধ্বস্ত প্রশান্তি,
প্রচেষ্টার সাথে যুদ্ধ হয়, মুহূর্তেই কিছু দুঃখ ভুলে চলে সম্মুখের পথে
যেখানে দাড়িয়ে আছে ঝরে যাওয়া মানুষের ছায়া, অতৃপ্ত সব আত্মা
ঝরা পাতা আর ঝরা মানুষের শুরু হয় যাত্রা
ছেড়া দ্বীপের উদ্দেশ্যে
তারা চিৎকার করে বলে আরও সীমাহীন ব্যথা আছে পৃথিবীর প্রান্তরে-
আরও আছে রোদন, ছেড়া অধ্যায়, ছেড়া পাতার আসমাপ্ত মহাকাব্য ।
  

ছেড়া পাতার কাব্য (মর্মর-১)

শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

প্রিয় আকাশকে জানিয়েছে শুভেচ্ছা-
বিবর্ণ ধুলোমাখা পথ, জল-সাগর, মেঘ-রোদ্দুর,মুক্ত বাতাস
সবুজ অরণ্যে ঘেরা মায়াময় উপত্যকা নাম তার ছেড়া দ্বীপ,
এখানে অনুভুত হয় ভারসাম্যহীন কম্পন,শ্বাস-প্রশ্বাসের ধ্বনি।
সুদূরে নীল আঁচল বাঁধা প্রান্তিক আকাশের বৈচিত্র্যময় রংমহল-
সুতোয় বাঁধা নৈসর্গিক সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা কখনোবা অন্ধকার,
অথাবা পড়ে থাকে অন্ধকারের খোলস, ভেজা চাঁদ, শুভ্র ছায়া,
অজস্র শিশির ভেজা ঘাসের ডগায় থাকে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের জাল,
সবুজ কার্পেটে নিত্য খেলা করে বিলাসী ঘাস ফড়িং এর দল
অঙ্কুরিত হয় স্বপ্ন বীজের, অগনিত সুখ,আনন্দ, হাসি, গানের।
 

এখানেই ঝরে পড়ে দীর্ঘশ্বাস, বিমর্ষ হলুদ পাতার রাশি-
ভাঙ্গা স্বপ্নের মানচিত্রের বুকে মর্মর ধ্বনি, বিরহ ব্যথার সুর
স্পষ্ট হয় দুঃখবোধ, বেদনার ব্যপ্ত নীল অধ্যায়,অসময়ের কাব্য,
হেয়ালি আশা প্রত্যাশার চাদর হাতে শূন্যতার মাঝে কাব্য বিলাস।
তবুও
বেখেয়ালী ঘোরে অসম্পন্ন থেকে যায় সে সুর,ছন্দ-
শুধু চিরচেনা পথের মাঝে খুজে পাওয়া ধুলোমাখা ক্ষীণ আনন্দ,
উড়ে যায় সেই সব ঝরা পাতা ক্লান্তির ঘোরে, নিরব অভিমানে,
এলোমেলো উড়ে উড়ে কখনোবা ফিরে আসে সেই বৃক্ষের নিচে-

যেখানে ছিল তার নীড়, ছিল আশৈশব গাঁথা কল্পনার বসতি
উন্মুখ হয়ে চেয়ে থাকে সবুজ পাতার দিকে,পেরিয়ে যায় কাল,
অথবা উড়ে যায় অন্য কোন খানে যেখানে হাহাকার শূন্য প্রান্তর-
যেখানে নেই সবুজ অরণ্য,জল-সাগর , নেই এতটুকুও ছায়া    
নিঃশেষে বিলীন হয় অন্তরাত্মা, ফুরিয়ে যায় রুপ,গন্ধ, সতেজতা,
অবশেষে হারিয়ে যায় শেষ মর্মর সুরে উদাসী হাওয়ার ডানায়।

ক্ষুদ্র আমি ক্ষীণজীবী এক মানুষ

মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

মানুষ! মানুষ আমি, ক্ষুদ্র আমি ক্ষীণজীবী এক মানুষ,
ক্ষণিকের তরে ক্ষীণ আশা লয়ে এসেছি এ ক্ষণিকালয়ে।
খরশাণ সময়ের মধ্যাহ্নে খণ্ডিত কাব্যে দেখি শূন্য খতিয়ান
তবুও রুদ্ধশ্বাসে গতিশীল জীর্ণ জীবনের রক্ত স্রোত,
আমি ভাসি সেই স্রোতে-
গাড় নিঃশ্বাসের তীব্র উষ্ণতা উপেক্ষা করে আমি ভিজে যাই।
দেখি- মুক্তির আশায় ছিটকে পড়েছে গলন্ত তরল এসিড,
আশা, প্রত্যাশা কিংবা স্বপ্ন তাই বিলীন হয়েছে নিরাশায়।

হায়! অন্ধ পৃথিবী, অন্ধ আজ লক্ষ কোটি সজাগ দৃষ্টি,
ভেঙ্গে গেছে সব দর্পণও, কোথাও তাই প্রতিবিম্ব নেই।
যে জলে এতদিন দেখেছি নিজের ছায়া তাও আজ ঘোলাটে
মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শুধু ভাঙ্গা ঘুম, ক্লান্তি আর ব্যর্থ দীর্ঘশ্বাস,
এখানেই বসবাস আমার-
চারিদিকে ক্ষুধা,তৃষ্ণা, বিতৃষ্ণা, মৃত্যুর ভয়, এই নাকি জীবন।
ভগ্ন প্রণয়ের সম্মুখে দেখি অস্তিত্ব, তবে তাও সংশয়ে ঘেরা,
তবে কি ভারসাম্যহীন বুকের পাটাতন অসার, বন্দী আবেগ।

হাহুতাশ! না না আমি অপারক তাতে, প্রকাশে দ্বিধাহীন,
রঙ্গিন মলাটের আড়ালে গুটিকয়েক কালো অক্ষরের কথা বলি।
ওরাও জানে ন্যাকামি, বিরিক্তিকর আদিখ্যেতা, তাই এত ঘিঞ্জি
তবুও কেটে কুটে লিখে যাই ফের, বেড়ে যায় পৃষ্ঠা, ব্যথাও,
এভাবেই কেটে যায় দিন-
কেটে যায় জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহূর্তগুলো, যেন ভাবলেশহীন।
দেখি-সম্মুখে প্রসারিত পথ, আলো-ছায়া, অন্ধকারের খোলস,
ভাবি ক্ষণজন্মের ইতিকথা, ক্ষুদ্র আমি ক্ষীণজীবী এক মানুষ।

প্রতিবন্ধকতার বলয়

সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

জন্মান্তর যদি মিথ্যে হয় এই হবে শেষ দেখা। দুঃখ, জরা,ক্লেদ,বিরহ, বেদনা কিংবা দগ্ধ যন্ত্রণার কাছ থেকে শুধু নয়, বিদায় নেব- নতুন সূর্য, আলোকিত পৃথিবী, ঝরা শিশিরের কাব্য, অঝোর ধারার বৃষ্টি থেকেও। জানি আমি এ অন্যায়, ব্যর্থ বোকা মানুষের কথা । এ সিদ্ধান্ত কেবলই মূর্খতা, তবুও আজ নিরুপায় আমি তাছাড়া আমি বিজ্ঞও নই। চারিদিকে ধুসর কাল ছায়া, প্রবঞ্চনার পঞ্চালিকা। ঘৃণায় প্রলুব্ধ মন আজ ভগ্ন বিশ্বাস আর তিক্ত যাপিত জীবনের অনুপুঙ্খের প্রান্তিক দ্বন্দ্বের সম্মুখে ঠাই দাড়িয়ে। শুধু কেঁপে ওঠা বুকের দীর্ঘশ্বাস বলে দেয় আমি বেঁচে আছি আজও।
পুরনো জানালার চৌকাঠে ধরা ঘুণ, ভগ্ন ঘরের চাল আমাকে বিভ্রান্ত করেছে প্রতিদিনই। চারিদিকে গভীর বিষাদের দেয়াল, বন্ধ দরজার পাল্লা। ভেবেছি আমি- ঐ ঘুণে ধরা জানালার চৌকাঠ, ভগ্ন ঘরের চালা সেকি মুক্তির দিশা নাকি নিরাশ্রয় হওয়ার অশনি সংকেত। দ্বিধা জাগ্রত মনে প্রতিটি ক্ষণে তাই জীবনকে মনে হয়েছে দুর্বোধ্য। অনুভুতি হয়েছে পথভ্রষ্ট, অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিভঙ্গি হয়েছে বিফল। তবুও বার বার ইন্দ্রিয়ভূত হয়েছে অচেনা এক সুর আজানা এক প্রতিবন্ধকতা ।
নিরেপেক্ষ মহাকালের কোলে আমি অপেক্ষা করেছি, করেছি আরাধনা,মিলাতে গিয়েছি এই তান্ত্রিক জীবনের যৌগিক অংকের সরল সমীকরণ।আমি পারিনি তা, তবে জেনেছি প্রেম মিথ্যে,শুধু কল্পনায় তার সত্য বিচরন।এখানে যুদ্ধ,ধংস,পাপ, অবিনাশী, বিবেক অন্ধ-বধির,জড় পদার্থ। তাই অপেক্ষার পালা শেষে আমি দুহাতে দেখেছি শুধুই শূন্যতা। তাই বেঁচে থাকার আকুলতা পৌঁছে গেছে একেবারে শূন্যের কোঠায়। অমরত্বের আগুন মিশ্রিত পরাজয়ের বলেয়ে বন্দী হয়ে আমার প্রতিটি পদক্ষেপ হয়েছে কেবলই অবান্তর। বেঁচে আছি এই সত্যকে প্রকাশ করতে আমি মিথ্যে অভিনয় করেছি প্রতিনিয়ত। হায় জীবন! অমূল্য উপহার সমাহার! হয়তো এটাই ভাগ্যের পরিহাস, নির্মম হেয়ালিপনার অমীমাংসিত অধ্যায়, চেনা-অচেনা জাগতিক পরাজয়ের অনুকাব্য। যে জন্মপরাজিত সে জয়ী হবেই বা কিভাবে? নিত্য সঙ্গী তার নিষ্ঠুর নিয়তি। জন্মই যেন হয়েছে অন্যায়, অপরাধ, আজন্ম পাপ। তাই প্রার্থনা আজ ক্ষমার।

পলাতক ভালোবাসা

বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৪

সুদূরে প্রসারিত হাত, হৃৎপিণ্ডে শুকনো পাতার মর্মর,
ঝড়ের বেগে বৃষ্টির আঁচড় লাগে তাই ক্ষত বিক্ষত হই।
বৃশ্চিক আঁখি শূন্যের পানে চেয়ে থাকে অপলক,
শুকনো বৃক্ষে ঝুলে থাকে মন একাকীত্বের অনুরোধে।
ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে আসে স্মৃতি তাই স্বপ্ন হয় বিভীষিকা,
তবুও ময়ূরী মন মালা বদলের গল্প সাজায় ঘিঞ্জি পৃষ্ঠায়।

আশার বুনোহাঁস উড়ে যায় ফের, দুঃখ দিগন্তপ্রসারী,
পুরনো ক্যাকটাসে বিঁধে থাকে প্রশান্তির মায়াময় ঘুম।
রৌদ্র চিঠি হারিয়ে যায় মেঘেদের বিস্তৃত পদচারনায়,
নিশ্চিত আত্মসমর্পণ করে উড়োচিঠি, মেলে না উত্তর।
স্বচ্ছ আভা সরে যায় দূরে, চকচকে অশ্রু ঝরে চোখে,
নক্ষত্র বিলায় আলো, তবে তা ডেকে আনে অন্ধকার।

সহস্র অন্ধকার রাত্রি পেরিয়ে যায়, একে যায় ব্যথাতুর,
স্পর্শে সূর্য হারায় আলো, দুহাতে দেখি শুধু কৃষ্ণ রেখা।
কালের বিবর্ণ ছাপচিত্রেও দেখি আলো,তবে তা ক্ষণিকের,
নামে গাড় বেদনার চুইয়ে পড়া জল, কুয়াশার ঢল।
বিমূর্ত স্বপ্নের কাফনে ঢেকে যায় মন, সমস্ত সত্ত্বা,
বেরিয়ে আসে বুকের পাঁজর ভেঙ্গে অসমাপ্ত দীর্ঘশ্বাস।

জীবনের আধুলি কুড়িয়ে হেঁটে যাই, তবুও অনেক বাকি,
আধোঘুমে জেগে ওঠা সকাল আমাকে বলে পথের দূরত্ব।
শুভ্র শেফালি ছুঁয়ে দেখি অতৃপ্ত মালার অব্যক্ত আর্তনাদ,
ভালোবেসে আমি হেঁটে যাই, চিরতরের দুঃখ মাখা পথে।
রংধনু, নীলিমা আমাকে ভাবায়, তবু তা আজ উপেক্ষিত,
আমি অদ্ভুত চোখে চেয়ে থাকি ধুধুময় শূন্য পথের পানে।

ওড়ে শঙ্খচিল, ওড়ে দাঁড়কাক, ভবঘুরে হলুদ পাখির দল,
উড়ে যায় ভালোবাসা, পড়ে থাকে ছিন্ন পালক তার।
ক্ষুধার্ত চোখ-ব্যর্থ আকাঙ্ক্ষায় খোঁজে পলাতক ভালোবাসা,
অজস্র প্রদীপ শিখার আড়ালে খোঁজে মায়াময়ী প্রেম।
শ্বাসরোধী আবেগ খোঁজে বিশ্বাস, অব্যর্থ স্বপ্ন, কাঙ্খিত আশা,
তবুও বার বার জন্ম নেয় হতাসা, হারিয়ে যায় প্রেম-স্পর্শ।

চোখে আঁকা উড়ন্ত এক সাদা বকের ডানা

রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৪

আমি দিকভ্রান্ত-
তুমি জেগে আছ চাতকীর মত ঐ দূর আকাশ সীমায়,
আকাঙ্ক্ষা, আক্ষেপ, হতাশার ছুটি কবে জানা নেই কারও-
শুধু চলেছি আমি, আর তুমি তাকিয়ে রও অপলক।

নিত্য বাতাসের লুকোচুরি দেখেছি আমি বেখেয়ালি মনে,
শুনেছি ঝরা পাতা, নক্ষত্র, শিশিরের বেদনাসিক্ত গান-
অলস মাটির করুণ তিয়াসি সুর,ঐ অরণ্যের হাহাকার ,
আমি দেখেছি পিচঢালা রাস্তায় দুঃখ, মলিন ল্যম্পপোস্ট-
ডানা ভাঙ্গা শালিকের বিষণ্ণ চোখে ভয়, বাঁচার আকুতি,
ধুলো মাখা পথে পড়ে থাকে স্মৃতির শৈশব,সুখ,স্বপ্ন,আশা।

আমি হেঁটে যাই-
চিরচেনা গলি ছাড়িয়ে অন্য পথে, অন্য জীবনের পানে-
যেখানে তুমি কিংবা তোমাদের কোন ছায়া নেই এতটুকুও,
নেই- অনুভবে অপ্রত্যাশিত আঘাতের কোন ক্ষত চিহ্ন।

নিদারুন কষ্টের রেখা ডিঙিয়ে আমি চলে যাব বিরতিহীন-
চলে যাব কোন এক বিচ্ছন্ন দ্বীপে, যেখানে কোন সূর্য নেই,
অন্ধকার সে দ্বীপে আলো দেবে নির্ঘুম জোনাকির দল -
নীল আলোয় ভরে যাবে চারিপাশ, উন্মুক্ত নীরব জলরাশি,
শুধু আমাকে ছোঁবে না জোনাকি, সে নীল আলোর রশ্মি-
কেননা আমার চোখে আঁকা উড়ন্ত এক সাদা বকের ডানা।

দুখের বাউল সন্ন্যাসী

সোমবার, ৭ জুলাই, ২০১৪

[১]
আমি যে বাউল উদাসী মনে, সন্ন্যাসী সাধু ব্যথা-সুরা পানে-
আমি যে বিবাগী বৈরাগী ভব –তব আমি যে ফেরারি ভিখারি ,
চলতি পথে আমি সেথা যাই, দিবসও বেলার যেথা আলো নাই-
যেথা শুধু দুখ ঘোর অমানিশা -কালো আঁধারের অভিসারী ।

[২]
পরাজিত আমি গ্লানি সাথী মোর,আলোর মাঝেও আঁধারের ঘোর-
খুজে ফিরি আমি দুর্গম গিরি – ধুধু বালুচর, পারাবার,
নিখিল এ ভুবনে পথচারী বেশে,ঘুরি আমি চেনা অচেনা দেশে-
ঘুরি আমি দুখ অন্বেষণে-আজ খুলে যাক সব ব্যথা দ্বার ।

[৩]
ঐ অস্ত রবির শেষ আলো আমি, মহা আধারিত অন্তর্যামী-
জাগে চাঁদ তাঁরা সে আঁধারের মাঝে-আমি শুধু তা দেখি নাই,
করুন সুরের বেদনার বাঁশি,কানে এসে হয় গভীর তিয়াসি-
মিটাতে পারিনা সে প্রানের তিয়াসা-আমি যে একাকী অসহায়।

[৪]
খুজি নাকো আমি সুখ তরী ভবে,জীবন নদীর উথাল স্রোতে-
খুজি নাকো আমি সুখ নীড় কভু – এই নিবিড় নিকুঞ্জে,
খুজে চলি আমি ব্যথা ভরা নদী,কষ্টেরা যেথা চলে নিরবধি-
বেদনারা যেথা কূলে কূলে ভেড়ে – নীল দুখের তরেঙ্গে ।

[৫]
হেঁটে চলি আমি দু পায়ে চরিয়া,শত বাঁধার ঐ দেয়াল চিরিয়া-
পাড়ি দেই আমি বনভুমি, মরু – অস্থির জল,তল,
খুঁজে চলি আমি আঁধারে আঁধারে, তিক্ত রোদের বুকের পাঁজরে-
কষ্টের রেখা কোথা আছে আঁকা-কোথা আছে আঁখি জল।
-আংশিক প্রকাশ।

অন্য সমীকরণে দাড়ায় চলমান জীবন

রবিবার, ৬ জুলাই, ২০১৪

দোলাচল! যৌগিক জীবনে সত্য মিথ্যার দোলাচল,অকারণ দ্বন্দ্ব,
শোক-তাপ, আনন্দ-হাসির মিশ্র প্রতক্রিয়া-সংজ্ঞাহীন কাব্য।
জাগতিক সভ্যতা আর নির্বোধ ইচ্ছে চলে অন্য নিয়মে,ভ্রান্ত পথে-
আর অন্য সমীকরণে দাড়ায় চলমান জীবন-প্রাণময় খণ্ড গল্প।
তবুও চলছে জীবন, বেঁচে থাকার আকুলতা, সৃষ্ট স্বপ্ন-আশা,
ভগ্ন আশার পুরনো দেয়াল ধরে দাড়িয়ে থাকে প্রচেষ্টার ছায়ামূর্তি।
প্রদাহ বাড়ে স্পর্শকাতর অভ্যন্তরে নিষ্পেষিত সুখের মর্মকথায়,
দুচোখের গভীরে তাই আশ্রয় নেয় বোবা নক্ষত্র, মৃত প্রেমের ছায়া।
হয়তো আজ প্রতিষ্ঠিত-রঙের আঁচড়ে আঁধারিত জীবন ক্যানভাস-
তবুও-জীবন ঠিকই মেঘবর্ণ,ঘোলাটে জলের অন্তহীন মহাকাব্য।
অন্ধত্ববোধ চুরি করেছে আলো, চারিদিকে বেখায়ালি অন্ধকার,
অন্ধ আঁধারের কান্না ভিজিয়ে দেয় রঙ মাখা আলো, নতুন ভোর।

জানিনা কতটা পথ আর বাকি

বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০১৪

আর কতটা পথ এগুলে মিলবে গন্তব্য ঠিক জানিনা-
তপ্ত রোদে পুড়েছে মুখের আঙ্গিনা, পায়ে ধুলোর চিহ্ন,
আকস্মাৎ চিড় ধরে নগ্ন মাটির বুকে, আমি তাকিয়ে দেখি-
আমি বিলাপ করি, হৃদয়ে আরও স্পষ্ট হয় দুঃখবোধ।
আমি চিৎকার করি- শুনতে পায় না কেউ, শুধু প্রতিধ্বনি জানিয়ে দেয়-
অমীমাংসিত অধ্যায়ের শেষ অনুচ্ছেদ।

কোন কথোপকথন নেই, নেই স্থিরতাও-
অস্থির, চঞ্চল, নির্দ্বিধায় শুধু একা একা পথ চলা,
কাল্পনিক সেই সময় হয়তোবা অধরা, মিথ্যে উপাখ্যান,
বুকের পাঁজরে জমেছে পচা প্রেম, তাই শোকও বিক্ষিপ্ত।
হাতের বক্ররেখা আমাকে চালিত করে ভ্রান্ত পথে, আমি হই দিকভ্রান্ত পথিক-
বুঝি জীবনের ব্যর্থতার সরল সমীকরণ।

কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন আমাকে কুরে কুরে খায় তাই-
মাঝে মাঝে পালাবার পথ খুঁজি গন্তব্যহীন দিক্বিদিক,
আমি মুখ লুকায় আঁধারে, দেখি সম্মুখে বিবস্ত্র মনুষ্যত্ব বোধ,
ভিখারির মত আমি ফিরে আসি তবুও করি মিথ্যে অভিনয়।
শুভ্রতার অভিশাপ আমাকে পোড়ায় ভীষণ, আমি ক্ষতবিক্ষত হই সর্বাঙ্গ জুড়ে-
তাই অনুভবে মিশে থাকে শুধু দগ্ধ যন্ত্রণা।

কখনোবা দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত হয় আমার ছায়ামূর্তির দিকে-
যেখানে বন্দী আমি, যেখানে আমার আজন্ম বসবাস।
আমি ফিরে তাকাই শূন্য বাতাসে, অপলক অবাক নয়নে,
আমাকে জাপটে ধরে হতাশা, জন্মান্তরের সঙ্গায়িত শূন্যতা।
নিকষ কালো রাতের একাকীত্ব আমাকে সঙ্গ দেয় উজ্জ্বল দিনের আলোতে-
আমি কথা বলি মৃতপ্রায় মানুষের মত।

তবুও বাঁচার গর্বে বার বার আত্মহারা হই-
বাণিজ্যিক ঋণ শোধ-পরিশোধের অংক কষি।
স্পষ্ট অস্পষ্ট স্বাক্ষরে মেটাতে চাই সব দেনা পাওনা-
জীবনের ক্ষুধার্ত যত অভিলাস।
আর কতটা সময়,আর কতটা পথ এগুলে মিলবে গন্তব্য ঠিক জানিনা -
জানিনা কতটা পথ আর বাকি ।

নিত্য বিচ্ছিন্ন হয় মৃত কোষাগার

শুক্রবার, ৯ মে, ২০১৪

কোন শাখা প্রশাখা নেই, ঠাই দাড়িয়ে শুধু শুকনো কাণ্ড-
পরগাছা নিয়েছে আশ্রয় তাই এখানে বাতাস আজও জীবন্ত।
রোদ্দুর, ঝরা বাদল আজও আসে এখানে, দেখে যায় তারুণ্য,
অগোচরে থেকে যায় একটি শেষ গল্প- মৃত কাণ্ডের বৃত্তান্ত।
অন্ধকারের দেয়াল এখানে নিশ্চুপ, শুধু কথা বলে জোনাকি,
বেদনায় নীল হয়ে জ্বলে জ্বলে নিভে যায়, পেরিয়ে যায় রাত-
তবুও- গল্পের ইতিতে হয় পুনঃরাবৃতি, আবার নতুন আলো
তবে সে আলো আসে জ্বালাতে, নিঃশেষে বিলীন অন্তরাত্মা।
ক্ষয়িষ্ণু নিষ্প্রাণে চিড় ধরে, নিত্য বিচ্ছিন্ন হয় মৃত কোষাগার,
শুধু -ধ্রিয়মাণ আলো, বাতাসের গন্ধ জড়ানো থাকে শরীরে।।