জীবন ক্যনভাসে ছিটকে পড়ছে নষ্ট আধুনিকতার রং

সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০১৪

আধুনিক শব্দটার সাথে আমরা পরিচিত সবাই যার আভিধানিক অর্থ নব্য, নতুন, চালু,সাম্প্রতিক, বর্তমান এ ছাড়াও বলা চলে- অধুনা, অধুনাতন, অদ্যাপি প্রচলিত, অর্বাচীন, নতুন অবস্থা। আর আধুনিকতা হচ্ছে- আধুনিক বিষয়, নবীনতা, সাম্প্রতিকতা, নতুন অবস্থা। এই আধুনিক এবং আধুনিকতাবাদ উৎপত্তি সম্পর্কে বিখ্যাত উপন্যাসিক রেমণ্ড হেনরি উইলিয়ামস বলেন আধুনিক (Modern) শব্দটি ইংরেজিতে প্রচলিত হয় ষোল শতকের গোড়াতেই এবং আধুনিকতাবাদ (Modernism) আঠারো শতকের জ্ঞানদীপ্তির যুগেই উদ্ভুত হয়।

স্বাভাবিক ভাবে আধুনিকতা বলতে বোঝায় যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলা। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তা হতে হবে অবশ্যই চিন্তা ভাবনা, শিক্ষায় ও মননশীলতায়। আর একটু বিশ্লেষণ করলে- আধুনিকতা আসলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, যাপিত জীবন এবং সময়ের সাথে নিবিড় ভাবে সম্পৃক্ত। মুলত যা কিছু সুন্দর, স্বচ্ছ, অর্থপূর্ণ এবং এই মানব সভ্যতায় যা কিছু আমাদের জন্য সঠিক, স্বস্থিকর, মঙ্গলজনক, যুগোপযোগী তাই-ই আধুনিকতা। যদিও অনেক কিছুই বলে ফেলেছি কিন্তু আধুনিকতাকে আসলে তত্ত্বগতভাবে উল্লেখ করা সম্ভব নয়। শুধু এই টুকুই মনে প্রানে ধারন করতে হবে যে আত্মচেতনাকে অক্ষুণ্ণ রেখে যুগোপযোগী হওয়াটায় আধুনিকতা।

কিন্তু বর্তমানে আধুনিকতার নামে বিশেষ করে তরুন প্রজন্মের অশালীন এবং উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপনে মননের চর্চা নেই বললেই চলে। একটু নির্দিষ্ট করে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বলা যায় বর্তমান এই তরুন প্রজন্ম ওয়েস্টার্ন কালচার এবং ফ্যসানের ব্যহিক চলনে শুধু আমাদের সংস্কৃতি এবং সৃজনশীলতাকেই খর্ব করছে তা নয় সাথে সাথে আমাদের সুস্থ জীবন যাত্রাকে শঙ্কার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। বিশেষ করে বর্তমানে মেয়েদের অশালীন পোশাক, বিভিন্ন অঙ্গে রং মেখে অবেদনময় প্রদর্শন, হালের ফ্যসানে গা ভাসনো পরিলক্ষিত হচ্ছে। আধুনিকতার নামে বিভিন্ন উৎসব, উপলক্ষে খোলামেলা পরিবেশে বেপরোয়া চলাফেরা এবং জনে জনে নিজেদের সতীত্বকে বিলিয়ে দেওয়ার মাঝেই শুধু সীমাবদ্ধ থাকছে না জড়িয়ে পড়ছে নানা রকম অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডের সাথে। সমাজে বৃদ্ধি পাচ্ছে অপরাধ প্রবনতার হার বহুগুনে যার সাথে সম্পৃক্ত শুধু মেয়েরাই নয়,অনেক ছেলে কিংবা পুরুষও। এছাড়াও আধুনিকতার নামে রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা বড় বড় বিলবোর্ডের মাঝে অর্ধনগ্ন কামাতুর বিজ্ঞাপন গুলোও অপরাধ প্রবনতার সহায়ক ভুমিকা পালন করছে। নষ্ট আধুনিকতার ছোঁয়ায় মিডিয়া অর্থাৎ টেলিভিশন, ডিস সংযোগ, ইন্টারনেট, পেপার পত্রিকা গুলোও এক বিরুপ প্রভাব ফেলছে যার জন্য দায়ী আধুনিক অসুস্থ ধারার খোলামেলা চলচিত্র,অশালীন ওয়েব সাইট,নগ্ন অর্ধনগ্ন বিজ্ঞাপন এবং পত্রিকার বিনোদন পাতার অশালীন চিত্র। এ রকম আরও অনেক কিছুই আধুনিকতার নামে আমাদের জীবন ক্যনভাসে ছিটকে ফেলাচ্ছে নষ্ট রং। আর এতে করে আমাদের শৈল্পিক জীবন হচ্ছে কুলসিত ।

একটি বিষয় আমাদের লক্ষ রাখতে হবে যে, কালে কালে আধুনিকতার নানা রকম লক্ষন থাকলেও একটি বিষয় সাধারণ্যে স্বীকৃত আর তা হল স্ব-চেতনতা (self-consciousness). এটাকে বলা যায় প্রথম এবং অনিবার্য শর্তও। আমাদের আরও মনে রাখতে হবে আধুনিকতা আসে শিক্ষা, শালীনতা এবং মনন থেকে, অশ্লীলতা থেকে নয়। আমরা অবশ্যই আধুনিক হব তবে তা কল্যাণকর এবং সুস্থ ধারার।

প্রতিবিম্বের বিবর্ণ কাব্য– ১৬

সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০১৪

কেউ একজন নীল দ্বীপ হতে এসেছে এখানে। নীলাভ চোখ দুটোর দিকে তাকালে মনে হয় শান্ত দুটি অথৈ জলের সমুদ্রপৃষ্ঠ। স্পষ্ট মুখের দিকে তাকালে মনে হয় কিছুটা মেঘলা আকাশ। হয়তো কিছুক্ষন পর বৃষ্টি নামবে। মনে হল সে মানুষ না। আমি কাছে এগিয়ে যাই, কৌতূহলে ছুঁয়ে দেখি।

মুহূর্তেই নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি আমি নীল হতে শুরু করেছি। সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নীল বর্ণ ধারন করছে। চোখ দুটো জ্বালা করে রক্তিম হয়ে উঠেছে। যেন সকালের রক্ত মাখা সূর্য। নিজেকে দেখে নিজেরই ভয় হল। আমি বিভ্রান্ত হলাম। বুঝতে পারলাম না আমি জীবিত নাকি মৃত।

চোখের কোনা বেয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রু মুছে দেখি তা রক্ত। তারপর বৃষ্টি এলো। আমি চোখ বুজে দাঁড়িয়ে ভিজলাম সে বৃষ্টির জলে। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি আমি স্বাভাবিক আর সেই নীল মানুষটি আমার সামনে। আমি ভীরু জিজ্ঞাসু কণ্ঠে বলে উঠি কে তুমি? তারপর সে মিলিয়ে যায় শূন্যে। শুধু একটি হাঁসির শব্দ মিশে থাকে বাতাসের বুকে। ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হতে থাকে আমার চারপাশে।

প্রতিবিম্বের বিবর্ণ কাব্য– ১৫

রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৪

সূর্যমুখী ফুল ফুটেছে ঐ। তাজা সে ফুলের ঘ্রানে মাতাল মৌমাছি প্রজাপতির দল। ঘুমন্ত ঝিঝি পোকারা জেগে উঠেছে উৎসবের আঞ্জামে। পানকৌড়িগুলো ডুব সাঁতার দেয় না আর। শুরু হল ফুল কেন্দ্রিক ছুটে চলা। একে একে ছুটে যেতে থাকল সবাই। ভিড়ের বেষ্টনী তৈরি হল সেই বাগিচা ঘিরে। সবাই তাকিয়ে রইল উন্মুখ হয়ে।

তবুও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই সে ফুলের। কেবলই সে তাকিয়ে রইল সূর্যের দিকে। তবুও সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষারত। কেউ কেউ বলল সে ফুল এখন উপসনারত, কেউ কেউ বলল বিষণ্ণ, কেউ কেউ নির্বিকার দাড়িয়ে রইল। সবাই যেন এক মহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায়।

এক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়ল সবাই। কেউই আর থাকতে চাইলো না সেখানে। তারা ফিরে যেতে চাইলো কিন্তু তারা স্মৃতিভ্রষ্ট হল। তারা ভুলে গেল ঠিকানা। অচেনা হয়ে গেল ফিরে যাওয়ার পথ। তারা বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে স্থির দাঁড়িয়ে রইল। চোখে মুখে ফুটে উঠলো অবুঝ অসহায়ত্বের ছাপ।

প্রতিবিম্বের বিবর্ণ কাব্য– ১৪

শনিবার, ১৫ মার্চ, ২০১৪

দিকবিজয়ীর মুকুট পড়ে আছে অবহেলায়। কেউ ছুঁয়ে দেখে না আর। দার্শনিকের চিঠিগুলো হারিয়ে গেছে। কিছু ধুলো পড়া সাদা কাগজের খামে বন্দি তা মুক্ত করেনি কেউ। ভোরের কুয়াশায় সবার অগোচরে ডানা মেলে উড়ে যায় সাদা বকের দল। প্রভাতে ঝরে যাওয়া কোমল ফুলগুলো পদদলিত হয় নিষ্ঠুর ভাবে।

বিদ্রোহের আগুন নিভে গেছে। পড়ে আছে ছাই। কোন দৌরাত্ম্য নেই আর। দোষগ্রাহীরা সব মৃত। দোষৈকদর্শীরা সব নিশ্চুপ। রক্তাক্ষের দৃষ্টি আজ মলিন। মরচে পড়েছে শাণিত তরবারির শরীরে। সুপর্ণ পাখিরাও হারিয়ে ফেলেছে পালক। এখন নগ্ন শরীরে তারা হেঁটে চলে সম্মুখে।

একদিন তেজদীপ্ত সূর্যের আগমনে তপ্ত হবে চারিদিক। ফের জ্বলে উঠবে আগুন। মলিন চোখেও দেখা যাবে অগ্নি শিখা। দার্শনিকের খোলা চিঠি হাতে দাড়িয়ে থাকবে এক যুবক। মাথায় থাকবে দিকবিজয়ীর মুকুট আর অন্য হাতে শাণিত খোলা তরবারি। নগ্ন পাখিরাও ফিরে পাবে পালক। অন্তিম মুহূর্তেও ভেসে ওঠে এই ছবি কোন এক যাত্রীর চোখের ক্যানভাসে।

প্রতিবিম্বের বিবর্ণ কাব্য– ১৩

শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০১৪

এই মৃত মহদেশে কোন রোদ্দুর নেই। উপরে মেঘলা আকাশ আর নিচে চোরাবালি। ঝরে গেছে সব পাতা। শূন্য বৃক্ষগুলো ঠাই দাড়িয়ে আছে। বিরান পথে পড়ে আছে দুখের স্পষ্ট মানচিত্র। নদীগুলো শুকিয়ে গেছে সব। ভাঙ্গা নৌকা আর বৈঠা গুলো পড়ে আছে তীরে।

এখানে বাতাস নেই। নেই ফুলের সৌরভ। স্তব্ধ সব পাখির কণ্ঠস্বর। একরাশ বিষণ্ণতা নিয়ে এখানে ভোর আসে নিঃশব্দে নিঃসঙ্গতার প্রতিরূপে। মৃত ঘাসের মলিন বুকে ঝরে না শিশির বিন্দু। সাদা বকের ঝাপটানো ডানায় ছুটে যায় না নরম রোদ্দুর মাখা স্বপ্ন।

মৃত ভালোবাসা এখানে ভবঘুরে। শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে রক্তচন্দন বৃক্ষের মূলে শুধু ধুক ধুক স্পন্দন। কালের সাথে বয়ে চলে এভাবে ধুসর জীবনের ছায়া। তারপর হঠাৎ মৃত নদীর বাঁকে পড়ে থাকা কাশফুল ছুঁয়ে ভালোবাসা জেগে ওঠে। আমি ছুঁয়ে দেখি তা সুখ পাখির ছেঁড়া পালক।

প্রতিবিম্বের বিবর্ণ কাব্য– ১২

বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ, ২০১৪

মুক্তমঞ্চের নাটক শুরু হয়েছে অনেক আগেই। কিছু দৃশ্য দেখতে দেখতেই ভারি পর্দা নেমে এলো। দর্শনার্থীদের কেউ কেউ বলছে এখন বিরতি। কেউ কেউ আসন ছেড়ে চলে যাচ্ছে। কারও কারও আগমন ঘটছে ঠিক ঐ মুহূর্তেই। বাকিটা দেখার জন্য উদগ্রীব অসংখ্য মানুষ।
ক্রমেই সরে যাচ্ছে ভারি পর্দাটা। চারিদিক থেকে কানে আসছে অজস্র হাততালির শব্দ। তারপর শুরু হল নতুন দৃশ্য। নতুন দৃশ্যে এসেছে কিছু নতুন মুখ। বিপ্লবী মুখগুলো দেখা যাচ্ছে না আর। সরিয়ে নেয়া হয়েছে কিছু প্রবীণ মুখও।

তারপর কিছুটা সময় পার হতেই মুখোশ পরা কিছু অভিনেতাদের আবির্ভাব হল। রঙ্গিন রঙ্গিন সব মুখোশের আড়ালে তারা কথা বলছে মেকি কণ্ঠে। আমরা কেউ-ই তাদের আর চিনতে পারলাম না। নাটকটা হয়ে উঠলো বিভ্রান্তিময়।

ওগো ও কিশোরী মেয়ে....

বুধবার, ১২ মার্চ, ২০১৪

ওগো ও কিশোরী মেয়ে____
ঐ দূর হতে চঞ্চল চোখে কার পানে থাকো চেয়ে ?
দুরু দুরু বুক খেয়ালী হাওয়ায় থেকে থেকে কেঁপে ওঠে,
মেঘের মিতালি খোলা চুলগুলি রাঙা ঠোঁটেতে পুষ্প ফোটে।
ব্যকুল হৃদয়ে বারে বারে ডাক কারে তুমি এত বারে ?
কার ছায়া তুমি দেখেছ জলে হৃদয় নদীর ধারে।
কে সাথী গো তোমার, কারে দেখ তুমি স্বপ্নে বিভোর হয়ে?
সে কি দেবে দেখা ভেঙ্গে ব্যকুলতা, দেবে কি তোমায় ছুঁয়ে?
নাকি নিশিদিন স্বপ্নে বিলীন হবে তুমি পুড়ে ছাই ,
ব্যথার বাঁধনে কারে বাঁধ তুমি কিযে তার পরিচয়?
সে কি প্রিয় হয়ে জীবনের পথে চলবে হাতটি ধরে ?
নাকি পথিকের বেশে অচেনা হয়ে-যাবে-আনপথে পথ ভুলে?

জানো না কিছুই তুমি____
তবু কেন আঁক চোখেতে তোমার গোধূলির বেলাভূমি।
রংধনু আঁকা রঙ্গিন আকাশ কেন খুঁজে ফের মিছে?
কেন একা একা বাসর সাজাও হৃদয়ের তটনীতে ।
ভোরের কোমল পুষ্প ছুঁয়েছ, ভেবেছ স্বপ্ন মাখা,
বোঝনিকো তুমি জীবনের পথ কতটা গরল বাঁকা।
বয়ে যায় বায়ু, খেলা করে রোদ, মেঘ হাসে চুপি চুপি,
নিশিদিন তুমি পড়ে যাও শুধু রাঙ্গা-প্রেম-স্বরলিপি ।
গেঁথে যাও মালা এ-বেলা ও-বেলা সারাবেলা সারাক্ষণ,
বেঁধে যাও বুক অজানা আশায় পেতে শুধু অনুক্ষণ।
স্বপ্ন আকাশে ডানা মেলে যাও ঐ দূর ছায়াপথে,
না জানি কোথায় হারিয়ে যে যাও, খুঁজে ফের আঁখিপাতে।

অবুঝ মনের তীরে____
না জেনে কেন ডেকে যাও ফের, কেন চাও ফিরে ফিরে?
উদাসিনী হয়ে চেয়ে রও কেন আঁধার গগণ পানে,
শুধু সাথী হয় রাতি জোনাকিরা, কথা কয় কানে কানে।
ওগো ও কিশোরী, মেঘবতী পরী কেন থাক তুমি জেগে?
কেন খোঁজ নীড় ঐ সে সুদূর আকাশের মেঘে মেঘে।
হিমেল বাতাস, চুপকথা ঘাস খেলা করে শিশিরেরা,
ভেবে ভেবে কেন ভাবনা আকাশে ডানা মেলে দিশেহারা।
রাত জাগা পাখি গেয়ে যায় গান বিরহ ব্যথার সুরে,
সেই সুরে কেন হও বেসামাল আপনা অন্তঃপুরে।
ঝিঝি পোকা ডাকে ঝিম ধরা সুরে, ডাহুকেরা দেয় ডাক,
কেন বল কথা কখনওবা একা, কখনওবা নির্বাক।

ব্যথা করে ওঠে চোখ_____
আঁধার এসেছে অন্ধ হয়ে আলোকিত দিবালোক।
তবুও তুমি চেয়ে আছো কেন এই সে শূন্য পথে?
হেথা চোরাবালি মরিচিকা শুধু কূলে কূলে বাঁকে বাঁকে।
কেন থাক তুমি আশায় আশায় স্বপ্নতে বুক পেতে,
কেন ভেসে যাও ভাঙ্গা তরী হয়ে উদাসী আবেগি স্রোতে?
এতো ঘোর লাগা সময় তোমার, অঘোর ঘোরের ঘোর,
ভুলে গেছ ঐ সাঁঝের বেলায় বন্ধ হয়েছে দোর।
ধূপ জ্বেলে তুমি বসিছ পূজায়, কামনা শুধু যে তার,
এতো বন্দনা, এতো প্রার্থনা, নিশিদিন একাকার।
তবুও সে দূরে, দূর বহু দূরে হয়তো হবে না দেখা,
কেটে যাবে দিন খুঁজে খুঁজে কেঁদে ভীরু হয়ে একা একা।

হয়তোবা পাখি হয়ে____
গেয়ে যাবে একা দুঃখ সুখের বিরহের গান গেয়ে।
শাঁখে শাঁখে তুমি খুঁজে যাবে তারে যে চির উদাসী একা,
মিনতির সুরে ডেকে যাবে তুমি যদি হয় ফের দেখা!
পালক ডানায় ক্লান্ত বাতাস যদি বলে ফিরে এসে,
কি পেলে তুমি ? সর্ব হারায়ে একা একা ভালবেসে ।
কি করে বোঝাবে তারে তুমি বল, আছে কোন উত্তর?
উঠবে না কেঁপে, বুক ফেঁপে ফেঁপে- তোমার কণ্ঠস্বর ?
শুকনো বৃক্ষের মৃত ডালে যদি সবুজের দেখা পাও,
তবে তারে খুঁজো আলোতে আঁধারে, রক্তিম জোছনায়।
যদি পাখি হও ফিরে এসো নীড়ে, দেখ সন্ধ্যা নামিছে ঐ,
বনের গহীনে আঁধারের বুকে রবে তুমি বল কই?

ফুলের মতন করে____
যদি ফোট তুমি কোমলতা নিয়ে লাজে রাঙা প্রতি ভোরে।
যদি গন্ধ বিলায়ে পেতে চাও তারে ভ্রমরের মত করে,
আসিবে কি সে শুভ্র সকালে ফোটা ফুল প্রান্তরে?
প্রজাপতি হয়ে আসিবে কি সে তোমার মৌ-এর ঘ্রানে ?
ছুঁয়ে যাবে রেণু পরাগের ঐ উষ্ণ কোমল প্রানে?
নাকি ঝরে যাবে পূজার ডালিতে উৎসর্গ ভগবানে?
নাকি দলিত হবে অনাদরে শুধু পথিকের পদতলে?
কত ফুল কত নীরবে ঝরেছে গভীর আবেগে কেঁদে,
রাখেনি হিসেব ভুলো মাটি এই ধুলো মাখা পথ বাঁকে।
কেন তবে কাঁদ শিহরের পানে বিরহের সাথী হয়ে,
মাতাল হাওয়ায় গন্ধ ছড়ায়ে একা একা কথা কয়ে।

অথবা নদীর মত____
বয়ে যাও যদি দুলে যাওয়া জলে, ফুলে ওঠা ঢেউ শত-
যদি নিরুদ্দেশের পানসী ভাসাও তোমার বহতা বুকে?
যদি চলে তা ছেঁড়া পাল তুলে বাতাসের তালে ধুঁকে-
যদি নিরুপায় মাঝি গেয়ে ওঠে গান বিরহের সুর লয়ে,
তারে তুমি বোল ফিরে এসো তীরে শত ব্যথা দুখ ভুলে।
যদি ছলছল জল উতলা হয়ে দুপারের পাড় ভাঙ্গে?
কি করে ভিড়াবে ভাঙা তরী ঐ যা ভাসে জলে অকারনে।
ঝরা পাতা যদি ভাসাও বুকেতে আমার অন্বেষণে,
তবে জেনে নিও বৃথা হবে তা অতল সংগোপনে।